ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
বর্তমান সময়ের ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ। ক্যান্সার একটি জটিল ও প্রাণঘাতী রোগ যেখানে মানুষের শরীরের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং নিয়ন্ত্রিনহীনভাবে বিয়োজিত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সারের কিছু বিশেষ লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। তাই আজকের আর্টিকেলে থেকে জেনে নিন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত। সম্পূর্ণ পোস্টটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনারা আরো জানতে পারবেন ক্যান্সার হলে কত দিন বাঁচে, ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ এবং ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর প্রাথমিক কিছু বিশেষ বিশেষ লক্ষণ সম্পর্কে।
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ
ক্যান্সার সাধারণত অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের ফলে সৃষ্টি হয়। অস্বাভাবিক কোষগুলো সাধারণত টিউমারের মত গুটি তৈরি করে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার হতে পারে তবে এর সূত্রপাত কোষের অভ্যন্তরে ডিএনএ বা জেনেটিক উপাদান থেকে শুরু হয়। ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমনঃ
- ব্লাড ক্যান্সার
- ফুসফুসের ক্যান্সার
- ব্রেস্ট ক্যান্সার
- কোলন ক্যান্সার
- স্কিন ক্যান্সার
- ব্রেন ক্যান্সার
- প্রোস্টেট ক্যান্সার
উপরিক্ত ক্যান্সারগুলো সাধারণত বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যদিও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনোও পুরোপুরি অজানা। তবে কিছু কিছু বিশেষ কারণ শরীরে ক্যান্সারে ঝুঁকি বাড়ায়। ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার বিশেষ কিছু কারণ হলোঃ
- বংশগত কারণ
- পরিবেশগত কারণ
- অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা
- ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ
ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়ার কারণে রোগ নির্ণয় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে পরবর্তী সময়ে কিছু কিছু বিশেষ লক্ষণ পুরীক্ষিত হলে ধরে নেওয়া যায় উক্ত ব্যক্তি ক্যান্সার আক্রান্ত। তাহলে এখন জেনে নিন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণঃ
- খুবই দ্রুত ওজন কমে যাওয়া
- অতিরিক্ত ক্লান্ত অনুভব করা
- ত্বক বা চামড়ার পরিবর্তন
- ক্ষুধামন্দা কমে যাওয়া
- দীর্ঘদিন ধরে শুকনো কাশি
- শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা করা
- মলত্যাগে পরিবর্তন হওয়া
- শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকা বা দোলা দেখা
- মানসিক অশান্তি অনুভব করা
- অস্বাভাবিক রক্তপাত
উপরিক্ত ১০ লক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। তবে ব্যক্তিভেদে এবং ক্যান্সারের ধরনভেদে লক্ষণগুলো আলাদা আলাদা হতে পারে। তবে যেকোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেলেই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা উচিত।
ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে
ক্যান্সার হলে কে কতদিন বেঁচে থাকবে এটা বলা মুশকিল। হায়াত এর মালিক উপর আল্লাহ্। ক্যান্সার হলে কে কতদিন বাঁচবে সেটা নির্ভর করে তার আয়ুর উপর। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এবং রিজিক স্রষ্টার হাতে। তবে ক্যান্সার হলে কেউ কতদিন বাঁচবে তা নির্ভর করে কিছু কিছু বিষয়ের উপর যেমন, ক্যান্সারে ধরণ, ক্যান্সারের স্টেজ, রোগীর বয়স, রোগীর শারীরিক অবস্থা, রোগীর চিকিৎসা গ্রহণ ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে রোগীর বাঁচার হার ভিন্ন ভিন্ন। মূলত নিম্নোক্ত নির্ভর করে।
ক্যান্সারের ধরণ
কিছু কিছু ক্যান্সার রয়েছে যেগুলো খুব দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে যেমন অগ্নাশয়ের ক্যান্সার। আবার তেমনি কিছু কিছু ক্যান্সার রয়েছে যেগুলো খুব ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে যেমন প্রোস্টেট ক্যান্সার। শরীরে যদি ক্যান্সার খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায় তাহলে পুরো শরীর আক্রান্ত করে ফেলে। আর পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়লে বাঁচার হার অনেক কম। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং বাচার সম্ভাবনা থাকে অনেকদিন।
চিকিৎসার ধরণ
ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসাগুলোর মধ্যে প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন, ইমিউনোথেরাপি বা সার্জারি। এগুলো চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল এবং শক্তিশালী। রোগী শারীরিক অবস্থা এবং রোগের ধরণ অনুযায়ী এগুলো প্রয়োগ করা হয়।
ক্যান্সারের স্টেজ
ক্যান্সার স্টেজ বলতে ক্যান্সারের পর্যায়েকর বুঝায়। অর্থাৎ রোগীর রোগটি কোন লেভেলে রয়েছে। ক্যান্সার যদি প্রথম বা দ্বিতীয় পর্যায়ে ধরা পড়ে তবে চিকিৎসা করার পর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর ক্যান্সার যদি চতুর্থ পর্যায়ে ধরা পড়ে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সে ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর হার অনেক বেশি।
রোগীর শারীরিক অবস্থা
রোগীর শারীরিক অবস্থা যদি খুবই খারাপ থাকে অর্থাৎ রোগীর বয়স বেড়ে যায়, রোগী শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং রোগী আরো অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকে তাহলে সবগুলো রোগ তাকে গ্রাস করি নাই এবং তার বাঁচার হার অনেক কমে যায়।
উপরিক্ত বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে রোগীর বাচ্চারা মরার আশঙ্কা। তবে পূর্বেই আমরা বলেছি হায়াত মউত সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। কে, কখন, কিভাবে, কোথায় মরবে সেটা নির্ধারণ করে মহান আল্লাহ। ক্যান্সার বিভিন্ন রোগবালাই একটি উছিলা মাত্র। আজকের আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় ছিল জেনে নিন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত।
ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা
ক্যান্সার রোগীরা সাধারণত অন্যান্য রোগীর মত সব ধরনের খাবার গ্রহণ করতে পারে না। কারণ ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের মুখের স্বাদ, শক্তি এবং রুচির নানা রকম পরিবর্তন ঘটে। তাই তাদের জন্য বিশেষ একটি খাবারের তালিকা তৈরি করা উচিত। ক্যান্সার রোগী যদি সঠিক পুষ্টি উপাদান না পায় তাহলে তার শরীরের শক্তি যোগান দিতে পারবে না এবং ক্যান্সার চিকিৎসার পার্শ্ববর্তীক্রিয়া সামাল দিতে পারবে না।
তাই ক্যান্সার রোগীর জন্য বিশেষ পুষ্টি সম্পন্ন খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে। আজকের আলোচনার বিষয় ছিল জেনে নিন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত। এখন আবার নিচে ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা দেখব।
প্রোটিন জাতীয় খাবার
ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার সময় প্রচুর পরিমাণে কেমোথেরাপি দেয়া হয় যার কারণে অসুস্থ কোষের পাশাপাশি সুস্থ কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাই। ক্ষতিগ্রস্ত কোষের মেরামতের জন্য শরীরে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। যেমনঃ
- মাছ
- ডিম
- দুধ
- মুরগির মাংস
- বাদাম ও বাদামের মাখন
- ডাল, মসুর, ছোলা
- সোয়া জাতীয় পণ্য
ফল ও সবজিজাতীয় খাবার
যদিও ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগের ক্ষেত্রে কাঁচা ফলমূল শাকসবজি খেতে নিষেধ করে তারপরও কিছু কিছু ফল ও সবজি খাওয়া উচিত। সাধারণত মোটা চামড়াজাতীয় ফল বা সবজি খেতে বলা হয় কারণ এগুলো সহজে সংক্রমিত হয় না। ফল ও সবজিতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার থাকে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
- পালংশাক, গাজর, ব্রকলি, বিট
- আপেল, কমলা, আঙুর, লেবু
- বেরিজাতীয় ফল (স্টবেরি, ব্লুবেরি)
- টমেটো, পেঁপে, পেয়ারা
- লালশাক, ডাটাশাক, কচুশাক
- রসুন
পূর্ণশস্য জাতীয় খাবার
শস্য জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার থাকে। যা আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে অনেক শক্তি যোগায় এবং পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে।
- লাল আটার রুটি
- ওটস
- চাল/বাদামি চাল
- মিষ্টি আলু
পানি/ তরল খাবার
এ সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। পানি ছাড়াও এগুলো খাওয়া যাবে।
- ডাবের পানি
- ফলের রস বা জুস
- স্যালাইন পানি
- ডালের পানি
- বিভিন্ন স্যুপ
যে সকল খাবার খাওয়া যাবেনা
- কাঁচা খাবার খাওয়া যাবে না
- পচা বা বাসি খাবার খাওয়া যাবে না
- ফ্রিজের খাবার খাওয়া যাবে না
- পুড়ানো খাবার খাওয়া যাবে না ( বার্বি কিউ, গ্রিল)
- প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাবার খাওয়া যাবে না
- তেল বা অধিক মসলাজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না
- কৃত্রিম রং বা মসলা এড়িয়ে চলুন
- শুটকি মাছ, রেড মিট এড়িয়ে চলতে হবে
- অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া যাবে না
- প্রসেসিং খাবার, প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে চলুন
একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর জন্য উপরোক্ত যে খাবারগুলো খাওয়ার জন্য বলা হয়েছে সেটা নিয়মিত খেতে হবে এবং যে খাবারগুলো খেতে একবারে নিষেধ করা হয়েছে সেগুলোর এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। যে কোন সমস্যায় দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ
একজন ক্যান্সার রোগীর জীবনের শেষ পর্যায়ে কিছু শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। উক্ত শারীরিক ও মানসিক লক্ষণগুলো দেখা দিলে ধরে নিতে হবে রোগীর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। নিচের লক্ষণগুলো ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ।
- চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টি কমে যাবে
- কথা বলার ধরণ পরিবর্তন হয়ে যাবে
- শ্বাস-প্রসার গ্রহণের পরিবর্তন দেখা যাবে
- ক্ষুধামন্দ্যা এবং তৃষ্ণা একবারে কমে যাবে
- শরীরের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাবে
- প্রসাব ও মলত্যাগের পরিবর্তন দেখা যাবে
- মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়বে
- গলার আওয়াজ গরগর শব্দ আসবে
- কথা বলার আগ্রহ কমে যাবে
- শরীরে বিভিন্ন স্থানে বেদনা/ ব্যাথা বৃদ্ধি পাবে
- বদহজম / পেটের সমস্যা দেখা যাবে
- চরম ক্লান্ত ও দুর্বলতা অনুভব হবে
উপরিক্ত লক্ষণগুলো সাধারণত ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ হিসেবে পরিচিত। আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় জেনে নিন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত।
লেখকের মন্তব্য
আজকের আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ১০ লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত। সম্পূর্ণ পোস্টটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনারা আরো জেনেছি ক্যান্সার হলে কত দিন বাঁচে, ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ এবং ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত।
সর্বোপরি পোস্টটি ভালো লাগলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। যেকোন প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। বন্ধুদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করে তাদের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ জানতে সাহায্য করুন।
রাজশাহীি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url