দাদের ঔষধ কি - দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক আজকের পোস্টের আলোচনার বিষয় হচ্ছে দাদের ঔষধ কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত। আজকের পোস্ট থেকে আমরা আরো জানবো দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ, দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম, পুরাতন দাদ এর চিকিৎসা, দাদ হলে কি সাবান ব্যবহার করা যাবে ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত। আপনি যদি দাদ রোগজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আজকে পোস্টে আপনার জন্য। 
দাদের ঔষধ কি
তাই দাদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পন্ন পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

দাদের ঔষধ কি

দাদ একটি ত্বকের রোগ। দাদ সাধারণত ফাংগাল বা ছত্রাক জনিত কারণে হয়ে থাকে। দাদ একটি চর্মরোগ হিসেবে পরিচিত। জেনে রাখা ভালো যে দাদ একটি ছোঁয়াচে রোগ। থাক আপনার বাড়ির যেকোনো ব্যক্তির হলে অবশ্যই সবার মধ্যে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। আবার অন্য আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলেও এই রোগটি বিস্তার লাভ করতে পারে। দাদ আমাদের শরীরের যে কোন জায়গায় হতে পারে। 


আমাদের মাথা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত যেকোনো জায়গায় দাদ আক্রমণ করতে পারে। সঠিক সময়ে দাদের সঠিক চিকিৎসা না দিলে খুব দ্রুতই পুরো শরীরে এর বিস্তার লাভ করে। দাদ আমাদের ত্বকের উপর ক্ষত সৃষ্টি করে এবং সেখানে রেসের আকার ধারণ করে। আক্রান্ত স্থান থেকে পানির জাতীয় এক প্রকার পূজ বের হয়। তবে শরীরের যে কোন চুলকানি কিন্তু দাদ নয়। দাদের কিছু বিশেষ লক্ষণ রয়েছে যেমনঃ 
  • প্রথমত আক্রান্ত স্থানটি ফুলে যাবে।
  • আক্রান্ত স্থানে লাল বৃত্তাকার ফুসকুড়ি পড়বে।
  • আক্রান্ত স্থানটা শুকনা ও খসখসে আকার ধারণ করবে।
  • আক্রান্ত স্থানে প্রচুর চুলকাবে।
  • চুলকাতে চুলকাতে আক্রান্ত স্থানে এর ওপরে লোমগুলো পড়ে যাবে।
  • আক্রান্ত স্থানে ছোট ছোট ফোসকা সৃষ্টি হবে এবং সেখান থেকে পানি বের হবে।
  • প্রচুর চুলকানোর ফলে সেখানে জ্বলবে এবং রক্তক্ষরণ হবে।
  • দাদ হলে মাথার চুল ওপরে যেতে পারে এবং নখ ভঙ্গুর হবে।
  • পুরো শরীরে চুলকানি এবং অস্বস্তি ভাব অনুভব হওয়া।
উপরিক্ত লক্ষণগুলো যদি লক্ষ্য করেন তাহলে ধরে নিবেন আপনি দাদে আক্রান্ত। তাই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন। অথবা প্রয়োজনে আপনি দাদের ঔষধ হিসেবে ফাংগাল বা ছত্রাকনাশক এন্টিবায়োটিক খেতে পারেন। দাদের অনেকগুলো ঔষধ পাওয়া যায় যেমন ক্রিম, জেল, লোশন, পাউডার, স্প্রে, ট্যাবলেট, মলম ও ক্যাপসুল। তবে অঙ্গভেদে বিভিন্ন রকমের ঔষধ ব্যবহার করা হয়। তাদের কিছু বিশেষ ঔষধ গুলোর মধ্যে রয়েছে।
  • কিটোকোনাজল
  • ফাঙ্গিটাক ক্রিম
  • ক্লট্রিমাজল ক্রিম
  • লিউলিজল ক্রিম
  • টার্বিনাফিন ক্রিম
  • অক্সিফান লোশন
  • ফাঙ্গিডাল ক্রিম
  • ইবারকোনাজল ক্রিম
  • মাইকোনাজল ক্রিম
উপরিক্ত ওষুধগুলো তাদের চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয়। তবে বিশেষ অঙ্গভেদে এবং আক্রান্তের তীব্রতা অনুযায়ী দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ায় উত্তম হবে। তাহলে ইতিমধ্যে আমরা দাদের ঔষধ কি সে সম্পর্কে জেনে গেলাম।

দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ 

উপরিক্ত তথ্য থেকে আমরা দাদ কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গেছি। আমাদের আজকের পোষ্টের আলোচনার বিষয় হচ্ছে দাদের ঔষধ কি এবং দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ সে সম্পর্কে বিস্তারিত। যেহেতু দাদ একটি চর্মরোগ ও ত্বকের চুলকানির রোগ তাই দাদ হলে কিছু কিছু খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়। কেননা, কিছু কিছু খাবারে দাদের এলার্জি রয়েছে যার কারণে দাদ আরো বেশি ভাবে আক্রমন করে অর্থাৎ ভালো হতে চাই না। তাই আমাদের উক্ত খাবার সম্পর্কে জানতে হবে। আমাদের জানতে হবে দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ সে সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক দাদু হলে কোন খাবারগুলো একেবারেই খাব না।


অতিরিক্ত মিষ্টিঃ দাদ হলে অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া উচিত নয় কারণ মিষ্টি খাবার দাদের সাথে সংযোজিত হতে পারে এবং তাদের প্রসার ঘটতে সাহায্য করতে পারে।

প্রক্রিয়াজাত খাবারঃ প্রক্রিয়াজাত খাবার আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আমাদের শরীরের জন্য তো ক্ষতিকর তারপরও দাদের জন্য আরো বেশি ক্ষতির কারণ। প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন প্যাকেটজাত মাংস, প্যাকেটজট খাবার, সোডা, পিজ্জা, কেক, স্ন্যাক্স, চকলেট, আইসক্রিম, বিয়ার ইত্যাদি।

মসলা জাতীয় খাবারঃ অতিরিক্ত মশলা জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই দাদ রোগ থেকে বাঁচতে মসলাজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন।

অ্যালকোহলঃ সাধারণত অ্যালকোহল আমাদের শরীরের জন্য এমনিতেই অনেক ক্ষতিকর। তার ওপর অ্যালকোহল দাদ রোগের প্রসার ঘটাতে সাহায্য করে।

শিং মাছঃ শিং মাছের দাদের এলার্জির রয়েছে। তাই শিং মাছ তাদের লক্ষণগুলো প্রকাশের সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ধূমপানঃ ধূমপান আমাদের ফুসফুস কে নষ্ট করে দেয়। ধূমপান শরীরের নানা রকম রোগের প্রাথমিক কারণ হিসেবে চিহ্নিত্ হয়। তাই দাদ থেকে বাঁচতে অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করুন।

সবজিজাতীয় খাবারঃ কিছু কিছু সবজীজাতীয় খাবার রয়েছে যেগুলো দাদ রোগের প্রসার ঘটতে সাহায্য করে এবং শরীরের চুলকানি বাড়ায়। যেমন বেগুন, কচু, ওল, ঢেঁড়স ইত্যাদি।

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম 

পূর্বে আমরা দাদ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। আমরা আরো জেনেছি দাদের লক্ষণ, দাদের ঔষধ কি খেতে হবে এবং কোন কোন খাবার দাদ হলে খাওয়া যাবে না সে সম্পর্কে। আমরা দাদের বিভিন্ন রকম ঔষধ সম্পর্কে জেনেছি যেমন লোশন, ক্রিম, ট্যাবলেট, মলম, ক্যাপসুল ইত্যাদি। উপরিক্ত তথ্য থেকে আমরা দাদের কিছু লোশন ও ক্রিম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। কিন্তু অনেকেই আছে যারা তাদের চুলকানি দূর করার জন্য ক্রিম ব্যবহার করে থাকে। 

কারণ ক্রিম ব্যবহার করলে খুবই দ্রুত উপশম মিলে। ক্রিম সাধারণত দাদের ওপর লাগানো হয় যার কারণে খুবই দ্রুত কাজ করে এবং আরাম দেয়। তাই অনেকেই তাদের চিকিৎসায় ক্রিমকেই প্রাধান্য বেশি দেয়। তাই এখন আমরা দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম সম্পর্কে জানব। দাদ চুলকানি দূর করার জন্য সাধারণত এন্টিফাঙ্গাল জাতীয় ক্রিমগুলো ব্যবহার করা হয়। 

তাই এখন আমরা কিছু অ্যান্টিফাঙ্গাল জাতীয় ক্রিম সম্পর্কে জানব। উপরে আলোচনা থেকে আমরা ইতিমধ্যে অনেকগুলো এন্টিফাঙ্গাল জাতীয় ক্রিমের নাম জেনে গেছি। দাদ চুলকানি দূর করার অনেকগুলো ক্রিম রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষক ক্রিম হলঃ
  • ফাঙ্গিটপ ২% ক্রিম
  • রেক্সগার্ড ২% ক্রিম
  • ক্যানডিসট্রেট ২% ক্রিম
  • রেলিনগার্ড ২% ক্রিম
  • রিংগার্ড২% ক্রিম
এগুলো ব্যতীত আরো অনেকগুলো অ্যান্টিফাঙ্গাল জাতীয় ক্রিম রয়েছে যেগুলো দাদ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। সেগুলোর নাম আমরা উপরে ইতিমধ্যেই জেনে গেছি। আপনি আপনার তাদের বিস্তারের উপর নির্ভর করে ফাঙ্গাল জাতীয় ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। জরুরী প্রয়োজনে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

পুরাতন দাদ এর চিকিৎসা 

দাদ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। কারণ পূর্বে আমরা জেনেছি দাদ একটি ছত্রাক জনিত ছোঁয়াচে রোগ। তাই দাদ থেকে বাঁচতে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে হবে। পুরাতন দাদ খুব সহজে ভালো হতে চাই না। তাই পুরাতন দাগ এর চিকিৎসা করার জন্য আপনাকে নিম্নোক্ত উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে।
  • নিজেকে পরিষ্কার রাখুন এবং জামাকাপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করবেন না।
  • আক্রান্ত স্থান আলতো করে পরিষ্কার করুন।
  • আক্রান্ত স্থান সবসময় শুষ্ক ও শুকনা রাখার চেষ্টা করুন।
  • আক্রান্ত স্থানে স্ক্র্যাচিং এড়িয়ে চলুন।
  • খুব সুন্দর স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন।
  • ব্যক্তিগত জিনিসপত্র শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
  • এন্টিফাঙ্গালজাতীয় ঔষধ সেবন করুন এবং ক্রিম ব্যবহার করুন।
  • সংক্রমিত বিছানা নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  • সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন পোশাক, পরিচ্ছেদ এবং তোয়ালে গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
  • আপনার বসবাসের স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  • খাদ্য তালিকায় চুলকানি জাতীয় খাবার রাখবেন না।
উপরোক্ত উপায়গুলো মেয়ে চলার চেষ্টা করুন। আর দাদ রোগের চিকিৎসায় এন্টিফাঙ্গাল জাতীয় ঔষধ সেবন করুন এবং এন্টিফাঙ্গাল জাতীয় মলম বা ক্রিম ব্যবহার করুন। উক্তউপায়গুলো নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার পুরাতন দাদ রোগ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো হয়ে যাবে। আজকের পোস্টের আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল দাদের ঔষধ কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

দাদ হলে কি সাবান ব্যবহার করা যায়

প্রিয় পাঠক আজকের আলোচনার বিষয় ছিল দাদের ঔষধ কি এবং দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ সে সম্পর্কে বিস্তারিত। আমরা ইতিমধ্যেই উপর একটু তথ্য থেকে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গেছি। এখন অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করে যে দাদ হলে কি সাবান ব্যবহার করা যাবে। আপনি দাদ হলে সাবান ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু এক ধরনের বিশেষ এন্টিফাঙ্গাল জাতীয় সাবান। কিটোকোনাজল ও লুলিকোনাজল জাতীয় এক ধরনের সাবান পাওয়া যায়। 

উক্ত সাবান দাদ রোগের স্থানে ব্যবহার করা যায়। তবে উক্ত সাবান ব্যতীত অন্যান্য সাবান দাদ রোগের প্রসার ঘটাতে পারে। উক্ত সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু নিয়ম ফলো করতে হবে। উক্ত সাবান গায়ে মেখে পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হয়। দাদ রোগীদের ক্ষেত্রে গোসলের 15 মিনিট আগে সারা শরীরে উক্ত সাবান বা শ্যাম্পু লাগাতে হয়। তারপর গোসল করে পুরা শরীর ধুয়ে ফেলতে হয়। 

তাহলে বোঝাই গেল যে, দাদ হলে আপনি সাবান ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু সে সাবান বা শ্যাম্পু এন্টিফাঙ্গাল জাতীয় হতে হবে। অর্থাৎ সাবানটি ছত্রাক বা ফাঙ্গাল ধ্বংস করতে পারে বা নিরাময় করতে পারে এরকম সাবান ব্যবহার করতে পারেন।

লেখকের শেষকথা

প্রিয় পাঠক আজকের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম দাদের ঔষধ কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত। আজকের পোস্ট থেকে আমরা আরো জেনেছি দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ, দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম, পুরাতন দাদ এর চিকিৎসা, দাদ হলে কি সাবান ব্যবহার করা যাবে ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত।

সর্বোপরি পোস্টটি ভাল লাগলে ফলো দিয়ে আমাদের ওয়েবসাইটের পাশেই থাকবেন। আমরা আপনাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য ও সরবরাহ করে থাকি। যে সকল বন্ধুরা দাদ রোগে আক্রান্ত তাদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করে তাদের দাদ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url