জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয়পাঠক আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে, জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত। আজকের পোস্টে আমরা আরো জানবো জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব, জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা, জন্ডিস হলে করণীয়, জন্ডিসের লক্ষণ, বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়, জন্ডিস হলে কি খেতে হয় ইত্যাদি বিষয়ে। আপনি যদি জন্ডিস সম্পর্কিত এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর গুলো জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। কেননা আজকের পোস্টে আমরা জন্ডিস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক জন্ডিস সম্পর্কে কিছু অজানা প্রশ্নের উত্তর।
বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
আমার আগে জেনেছি যে বিলিরুবিনের মাত্রা কম বেশি হয়ে গেলে সাধারণত জন্ডিস হতে পারে। বিলিরুবিন হচ্ছে রক্তের একটি বিশেষ উপাদানের নাম। বিলিরুবিন দুই প্রকার যথা: অসংলগ্ন এবংসংযোজিত বিলিরুবিন। রক্তে বিলিরুবেনের স্বাভাবিক মাত্রা 1.0 mg বা dl ( 17 μmol/L ) এর নিচে এবং মাত্রা 2-3 mg বা dl ( 34-51μmol/L ) এর বেশি হলে সাধারণত জন্ডিস হয়। তবে কিছু কিছু বিশেষ খাবার খেলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায়।
তাই বলা হয় জন্ডিস কোন রোগ নয় এবং জন্ডিসের কোন নির্ধারিত বা নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। কিছুদিন বিশ্রাম নিলে এবং নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং জন্ডিস থেকে মুক্তি মিলে। বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়ার বিভিন্ন ধরনের কারণ রয়েছে। আমাকে একটি প্রধান কারণ হচ্ছে লোহিত রক্তকনিকা অতিরিক্ত ভেঙ্গে যাওয়া।
আর বাংলাদেশের জন্ডিসের প্রধান কারণ হচ্ছে ভাইরাল হেপাটাইটিস। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস সি। আজকের পোষ্টের আলোচনার বিষয় ছিল জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
প্রিয় পাঠক আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত। এখন আমরা জানবো জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে। পূর্বে আমরা জেনেছি জন্ডিস কোন বিশেষ রোগ নয় এবং এ রোগের কোন নির্দিষ্ট বা নির্ধারিত ঔষধ নেই। এই রোগীর একমাত্র ওষুধ হচ্ছে নিয়মিত রুটিন মাফি খাওয়া-দাওয়া করা।
তাই জন্ডিস হওয়ার সাথে সাথে অনেকেই চিন্তায় পড়ে যায় যে রোগীকে কি খাওয়াবে বা কি কি খেতে দেবে কি এবং খেতে দিবে না। এখন আমরা জানবো জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত।
শস্য জাতীয়
- চাল
- রুটি
- ওর্টস
- ভাত
সবজি জাতীয় খাবার
- মিষ্টি কুমড়া
- মিষ্টি আলু
- টমেটো
- গাজর
- আলু
- পাতাকপি
- ফুলকপি
- ব্রকলি
- বিট
- মুলা
- পুঁইশাক
- পালং শাক
ফল জাতীয় খাবার
- তরমুজ
- পেঁপে
- আনারস
- বেরিস
- জলপাই
- কলা
- আম
- কমলা
- পেয়ারা
- আঙ্গুর
- আপেল
- অ্যাভোকাডো
- আখের রস
প্রোটিন জাতীয়
- মাছ
- ডাল
- মুরগির মাংস
পানি জাতীয় খাবার
- আখের রস
- ডাবের পানি
- কমলার রস
- পানি
- ফলের জুস ইত্যাদি।
প্রিয় পাঠক উপরের তথ্য থেকে আমরা জন্ডিস রোগীর খাবারের তালিকা সম্পর্কে আর একটা ধারণা পেয়ে গেছি। তবে দুদ্ধ জাতীয় খাবার গুলো আমাদের পরিহার করা উচিত। কেননা দুধে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকে যা আমাদের যকৃতের জন্য ক্ষতিকর।
জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
জন্ডিস হলে অনেকে অনেক রকম প্রশ্ন করে। তার মধ্যে মানুষের কমন প্রশ্ন হচ্ছে, জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে ? উত্তর হচ্ছে না। কারণ জন্ডিস হলে আমাদের তেল জাতীয় ও মসলাজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। কেননা জন্ডিস হলে রোগীর পেট ভালো থাকে না। যার কারণে বেশি ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়। ডিমের অধিক পরিমাণে ফ্যাট পাওয়া যায় যার কারণে জন্ডিস হলে এটা খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তাই জন্ডিস হলে ডিম খাওয়া উচিত নয়। ডিমের পাশাপাশি মাখন বেশি খাওয়া উচিত নয়। আজকের পোস্টের আলোচনার বিষয় হচ্ছে জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
জন্ডিস হলে করনীয়
এখন আমরা জানবো জন্ডিস হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে। এর মধ্যে অনেকেই আছে যারা জন্ডিস কে জটিল এবং কঠিন রোগ মনে করে থাকে। কারণে জন্ডিস হওয়ার পর তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পরবে যে তাকে নিয়ে কি করা যায়। তাই জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার এবং ওই ব্যক্তিকে সচেতন হতে হবে। প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে। গ্রামের দিকে অনেক ভান্ত ধারণা রয়েছে যেগুলো একবারে পরিহার করতে হবে।
গ্রামের মানুষ জন্ডিস হলে সরাসরি কবিরাজ এর কাছে চলে যায় যার কারনে সমস্যা আরো বৃদ্ধি পায়। কবিতা দ্বারা কোন প্রকার পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের গাছ গাছালি দিয়ে থাকে যার মাধ্যমে সমস্যা আরো গুরুতর হয়ে যায়। আমার গ্রামের মানুষ মনে করে জন্ডিস হলে আখের রস খেতে হবে। একটু চিকিৎসকরা জন্ডিস হলে আখের রস খেতে বারণ করে কারণ এতে আপনার শরীরে শর্করা এবং ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
এবং অবস্থার ভয়াবহ হতে পারে। তাই জন্ডিস হলে আখের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম। জন্ডিস সাধারণত বিভিন্ন ধরনের রক্ত, সিরিজ ইত্যাদি মাধ্যমে ছড়ায়। আবার আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়ায়। আমার সেলুনে সেভ করার সময় একজনের থেকে অন্য জনের জন্ডিস হতে পারে। তাই একজন আক্রান্ত ব্যক্তির এগুলো বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত।
বিশ্রাম নেওয়া এবং সচেতন থাকার পাশাপাশি জন্ডিস হলে একটি ভালো মানের খাদ্য তালিকা তৈরি করে খাবার গ্রহণ করা উচিত। উপরে আমরা ইতিমধ্যে একটি জন্ডিস রোগীর জন্য খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জেনে গেছি। আজকের পোস্টের আলোচনার বিষয় হচ্ছে জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
জন্ডিস এর লক্ষণ
প্রিয় পাঠক আজকের পোস্টে আমরা জানবো জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কিত আলোচনা। এখন আমরা জন্ডিসের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। চলুন জেনে নেওয়া যাক জন্ডিসের লক্ষণঃ
- চোখ, প্রস্রাব ও শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করবে
- হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে মুখে খাদ্য গ্রহণে অরুচি দেখা দিবে
- শরীরে অস্বাভাবিক দুর্বলতা দেখা দিবে
- বমি বমি ভাব অথবা বমি হবে
- অস্বাভাবিক পেট ব্যাথাও দেখা দিতে পারে
- হালকা থেকে ভারি জ্বর বা জ্বর-জ্বর ভাব দেখা দিবে
- পায়খানার রং কালো হতে পারে।
- শরীর সাদা ফেকাসে হয়ে যাবে
- পেট ও পায়ে পানি জমতে পারে।
প্রিয় পাঠক উপরিক্ত লক্ষণগুলো সাধারণত একজন জন্ডিস রোগীর জন্য দেখা দিতে পারে। তবে ব্যক্তিভেদে লক্ষণগুলো একটু একটু ভিন্ন হতে পারে।
জন্ডিস হলে কি খেতে হয়
পূর্বে আমরা জেনেছি যে জন্ডিস কোন বিশেষ রোগ নয়। এটি রক্তের বিলুরুবিনের মাত্রা কমবেশির কারণে হয়ে থাকে। তাই নিয়মিত খাদ্য অভ্যাস করে রক্ত বিলের বনের মাত্রা স্বাভাবিক করতে পারলেই মুক্তি দিবে। তাই অনেকে প্রশ্ন করে জন্ডিস হলে কি খেতে হয়। এখন আমরা জানবো জন্ডিস হলে কি কি খেতে হয় সে সম্পর্কেঃ
- নিয়মিত প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ ক্লাস পানি পান করতে হয়। পানি বেশি বেশি পানি পান করলে শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো প্রসবের মাধ্যমে বের হয়ে যায় এবং লিভার সুস্থ থাকে।
- জন্ডিস হলে সাধারণত হজম শক্তি কমে যায়। যার কারণে কিছু কিছু হরণকারী ফল যেমন কমলালেবু, পেঁপে, আনারস ইত্যাদি খেতে হবে।
- লিভার পরিশোধনের আনারস খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত আনারস খান।
- নিয়মিত চা খাওয়ার সাথে পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। পুদিনা পাতা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
- প্রতিদিন নিয়ম করে দীর্ঘ সময় বিশ্রাম নিন। এবং পরিশ্রম করা বন্ধ করুন।
- খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ফলমূল এবং সবজি অর্থাৎ আজ জাতীয় খাবার নিয়মিত খান।
- মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
- জন্ডিস হলে তরল এবং আখের রস অর্থাৎ তরল জাতীয় খাবার বেশি খান। মাছ মাংস আমির বেশি না খাওয়াই উত্তম।
- অতিরিক্ত তেল, হলুদ ও মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এগুলো খাবারের স্বাদ বাড়ায়কিন্তু আপনার শরীরের অনেক ক্ষতি করে।
- সর্বোপরি ডাক্তারের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকা তৈরি করুন।
আজকের পোষ্টের আলোচনার বিষয় ছিল জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত। আজকের পোস্ট থেকে আমরা জন্ডিস সম্পর্কিত নানা রকম প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি।
জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব
জন্ডিস কোন বিশেষ রোগ নয় এটি রোগের লক্ষণ মাত্র। জন্ডিস সাধারণত বিলিরুবিনের পরিমাণ কম বেশি হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। বিলিরুবিন হচ্ছে রক্তের একটি উপাদানের নাম। তাই জন্ডিসের নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই। বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে পরিমাণ স্বাভাবিক হলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জন্ডিস ভালো হয়ে যায়।
তবে জন্ডিস হলে নিয়মিত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি বিশ্রাম নিতে হবে। তাই জন্ডিস হলে ঔষধ খাওয়ার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবারের ওপর গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়। রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক আনার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে নানা রকম খাবার খাওয়ানো হয়। তাই জন্ডিসের জন্য বিশেষ বা আলাদা কোন ঔষধ এর প্রয়োজন পড়ে না।
তারপরও অনেকে শরীরকে সুস্থ সবল এবং কর্মক্ষম রাখার জন্য কিছু কিছু ঔষধ সেবন করে। তবে অনেকে জন্ডিস হলে হেপাকাইন্ড সিরাপ (hepakind syrup) খেয়ে থাকে। আজকের পোষ্টের আলোচনার বিষয় হচ্ছে জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত। উক্ত সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে সম্পর্ক করতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
লেখকের শেষকথা
প্রিয় পাঠক আজকের পোষ্টের আলোচনার বিষয় ছিল জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত। আমরা আরো জেনেছি জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব, জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা, জন্ডিস হলে করনীয়, জন্ডিসের লক্ষণ, বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।
সর্বোপরি আশা করি আজকের পোস্ট থেকে আপনি আপনার কাঙ্খিত তথ্য পেয়ে গেছেন। তাই নিয়মিত এ ধরনের পোস্ট করতে একটি লাইক ও ফলো দিয়ে ওয়েবসাইটের পাশেই থাকবেন। বিশেষ কোন বিষয়ে জানা থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিবেন। বন্ধুদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করে তাদের জন্ডিস সম্পর্কে জানার এবং বোঝার জন্য সাহায্য করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url