ব্রংকাইটিস কি? ব্রংকাইটিস এর লক্ষণ – বিস্তারিত জানুন

ব্রংকাইটিস (Bronchitis) হলো শ্বাসনালীর প্রদাহজনিত একটি রোগ যা ফুসফুসে প্রবেশের পথে বাতাস বহনকারী ব্রঙ্কিয়াল টিউবগুলোতে সংক্রমণ বা জ্বালা সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত ভাইরাসজনিত, তবে কখনো কখনো ব্যাকটেরিয়া, ধূলাবালি, ধোঁয়া কিংবা পরিবেশ দূষণের কারণেও হয়ে থাকে। 
ব্রংকাইটিস কি? ব্রংকাইটিস এর লক্ষণ
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্রংকাইটিস রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। 

ব্রংকাইটিস কয় ধরণের হয়? 

ব্রংকাইটিস দুই ধরনের হতে পারেঃ 

1. একিউট ব্রংকাইটিস (Acute Bronchitis): 
এটি স্বল্পমেয়াদি হয় এবং সাধারণত ঠান্ডা লাগা বা ভাইরাস সংক্রমণের পর হয়ে থাকে। একিউট ব্রংকাইটিস কয়েকদিন থেকে এক-দুই সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে।


2. ক্রনিক ব্রংকাইটিস (Chronic Bronchitis):
এটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা, যেখানে রোগী মাসের পর মাস ধরে কাশি, শ্লেষ্মা এবং শ্বাসকষ্টে ভুগে থাকেন। এটি সাধারণত ধূমপানজনিত বা দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণের সংস্পর্শে থাকার কারণে হয়।

ব্রংকাইটিস এর প্রধান লক্ষণসমূহ

ব্রংকাইটিসের লক্ষণ নির্ভর করে রোগটি একিউট না ক্রনিক তার ওপর। তবে উভয় ধরণের কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে তুলে ধরা হলোঃ

১. নিরবিচার কাশি (Persistent Cough):
ব্রংকাইটিসে প্রধান লক্ষণ হলো কাশি। এটি প্রায়শই শুকনো কাশি হিসেবে শুরু হয় এবং পরে শ্লেষ্মাযুক্ত কাশিতে পরিণত হয়।

২. শ্লেষ্মা নির্গমন (Mucus Production):
সাদা, হলুদ, সবুজ এমনকি কখনো কখনো রক্তমিশ্রিত শ্লেষ্মা কাশির সঙ্গে নির্গত হতে পারে।


৩. শ্বাসকষ্ট (Shortness of Breath):
বিশেষ করে হেঁটে চললে বা পরিশ্রম করলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এটা ক্রনিক ব্রংকাইটিসে বেশি দেখা যায়।

৪. বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি (Chest Discomfort):
কাশির কারণে অনেক সময় বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হয়।

৫. হালকা জ্বর ও কাঁপুনি (Mild Fever and Chills):
একিউট ব্রংকাইটিসে হালকা জ্বর দেখা দিতে পারে, যদিও তা সবসময় হয় না।

৬. ঘরঘর শব্দ (Wheezing):
শ্বাস নেওয়ার সময় ঘরঘর শব্দ শোনা যেতে পারে, যা সাধারণত শ্বাসনালীর সংকোচনের কারণে হয়।

৭. অবসাদ (Fatigue)
শরীর দুর্বল লাগা এবং কাজ করার শক্তি কমে যায়।

ব্রংকাইটিস কখন বিপদজনক?

যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ নেওয়া উচিতঃ 
  •  কাশি দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়
  •  শ্লেষ্মায় রক্ত মিশ্রিত থাকে
  •  উচ্চ মাত্রার জ্বর
  •  শ্বাস নিতে চরম কষ্ট হয়
  •  বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যথা হয়
  •  হাঁপানির মতো লক্ষণ দেখা দেয়

ব্রংকাইটিস প্রতিরোধে করণীয়

  •  ধূমপান ত্যাগ করুন
  •  ধূলাবালি বা ধোঁয়া থেকে দূরে থাকুন
  •  হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
  •  ভ্যাকসিন নিন (ফ্লু ও নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন)
  •  সুষম খাদ্যগ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন

উপসংহার

ব্রংকাইটিস একটি সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হলেও এটি অবহেলা করলে জটিল আকার ধারণ করতে পারে, বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে। সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যদি আপনি দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা শ্বাসকষ্টে ভুগে থাকেন, তবে দেরি না করে একজন অভিজ্ঞ বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিন, শ্বাস নিন মুক্তভাবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রাজশাহীি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url