দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন

স্বাস্থ্যই সম্পদ। সুতরাং স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আমাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। দুধ হচ্ছে স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে অন্যতম। তাহলে দুধ সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা উচিত। আসুন আমরা এই পোস্টে দুধ খাওয়ার নিয়মকানুন , গুনাগুণ, সঠিক সময় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিই।

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। দুধ হল সুষম খাদ্য কেননা খাদ্যের সব উপাদানই দুধে থাকে।অন্যান্য খাদ্যের মত দুধ আমাদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য। প্রতিদিন রাতে আমাদের দুধ পান করা উচিত। ছোট বড় সবারই প্রতিদিন দুধ পান কর উচিত। কেননা দুধ উচ্চ প্রোটিনযুক্ত একটি খাবার।

ভুমিকা

ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যে ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকে। কিন্তু এমন কোন খাদ্য আছে কি যে খাদ্যে সবগুলো পুষ্টি উপাদান (আমিষ, শর্করা, চর্বি, পানি, ভিটামিন , স্নেহ ) থাকে। হুম আছে, সেটা হল দুধ। দুধে সবগুলো উপাদান থাকে তাই দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়।

দুধ সম্পর্কে কিছু কথা

দুধ হল অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ এক ধরণের সাদা পদার্থ। দুধ একটি আমিষ জাতীয় খাদ্য। আমাদের শরীরের জন্য দরকারি ৬ টি উপাদানের সব কয়টি থাকে দুধে তাই একে দুধকে আমিষ জাতীয় খাদ্য বলে। জন্মের পর সব স্তন্যপায়ী প্রাণীরা মায়ের স্তন থেকে দুধ পান করা থাকে। দুধে আমিষ সহ ল্যাকটোজ সহ আরও অনেক উপাদান থাকে। মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণী বড় হয়ে অনেক প্রাণীর ( গরু, ছাগল, মহিষ, উট, ভেড়া) দুধ পান করে থাকে। গৃহপালিত প্রাণী থেকে আমরা দুধ সংগ্রহ করে থাকি।

দুধ খাওয়ার পদ্ধতি

দুধ আমরা যেকোনো সময়ই খেতে পারি তবে আমাদের ভরপেটে দুধ পান করা উচিত নয়। এর আমরা জানি যে দুধে ল্যাকটোজ এসিড থাকে তাই আমাদের দুধ খাওয়ার টক জিনিস, যেমন ফল, দই এগুলো খাওয়া চলবে না। এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। খাবার খাওয়ার একটি নিদিষ্ট সময় পর ৪০/৫০ মিনিট পর আমাদের দুধ পান করা উচিত।

দুধ পান করার সময় আমাদের হালকা গরম করা দুধ পান করা উচিত। দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে তাই দুধ খাওয়ার সঠিক সময় হচ্ছে রাতে। কেননা রাতে আমরা কাজকর্ম থেকে বিরত থাকি এই সময় শরীর ক্যালসিয়াম শোষণ করে বেশি। রাতে এক গ্লাস গরম দুধ আমাদের শরীরে শক্তি যোগাই। আবার দুধে অ্যামাইন এসিড থাকে আর অ্যামাইন এসিড আমাদের ভালো ঘুমের জন সহায়ক তাই রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস গরম দুধ আমাদের ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে।

শুধু যে রাতে দুধ খাওয়া যাবে তাই নয় আপনি চাইলে সকালে দুধ খাতে পারেন। দুধের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীর গঠনে সাহায্য করে। আমাদের হাড় গঠনে সাহায্য করে ক্যালসিয়াম আর ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ফসফরাস,ম্যাগনেসিয়াম আমরা দুধ থেকে পেয়ে থাকি। অতএব দুধ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেক।

গরুর দুধের উপকারিতা

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি দুধের অনেক উপকারি গুন সম্পর্কে। এখন আমরা গরুর দুধের উপকারিতা জানবো। আমাদের দেহ গঠনের জন্য প্রয়োজন ভিটামিন, ক্যালসিয়াম , ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-১২, ফসফরাস এগুলো সবই থাকে গরুর দুধে। এই সব পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ক্যানসার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে গরুর দুধের শক্তিশালী ভূমিকা রয়েছে।

গরুর দুধে পানি ৮৬.৫%, ল্যাকটোজ ৪.৮% ফ্যাট ৪.৫%, প্রোটিন ৩.৫%, এবং খনিজ ও ভিটামিন ০.৭% থাকে। এই সব পুষ্টির আধার গরুর দুধ। তাছাড়া গরুর দুধে আয়রন, কপার, জিংক, আয়োডিন ইত্যাদি উপাদান থাকে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরি।

পাউডার দুধের উপকারিতা কেমন ?

পাউডার দুধ সাধারণত ফ্যাক্টরিতে শোধন করা হয়। দুধে পানি ৮৬.৫%, ল্যাকটোজ ৪.৮% ফ্যাট ৪.৫%, প্রোটিন ৩.৫%, এবং খনিজ ও ভিটামিন ০.৭% থাকে যেগুলো ফ্যাক্টরি তে বাষ্পীভূত করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না দুধ আদ্রতা হারায় আর কঠিন না হয় । যেহেতু তরল দুধের মেয়াদ অনেক কম তাই পাউডার দুধ এর অনেক গুরুত্ব আছে। পাউডার দুধে অক্সিডাইজড কোলেস্টেরল থাকে যা আমাদের জন্য খুব প্রয়োজনীয়।

পাউডার দুধের এই উপাদানটি আমাদের নালীর মধ্যে আটকে থাকে যা আমাদের রক্তনালীর ক্ষতি করে। তাছাড়া গুড়ো দুধে বিভিন্ন কৃত্রিম উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় যেইটা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আবার গুঁড়া দুধের স্বাদও তরল দুধের চেয়ে অনেকই কম। গুঁড়া দুধ একটু সহজলভ্য হওয়ার কারণে বাজারে এর চাহিদা একটু বেশি।

কিন্তু গুঁড়া দুধ পানির সাথে ভালোভাবে মিশেও না। পানিতে দিলে দলা পাকিয়ে থাকে যার কারণে গুঁড়া দুধ খাওয়ার পর আমাদের পেট খারাপ করতেও পারে। সব মিলিয়ে বলা যায় যে বেশি প্রয়োজন না হলে গুঁড়া দুধ ব্যবহার না করাই উত্তম।

পাউডার দুধে কি অ্যালার্জি আছে ?

আমরা উপর থেকে পাউডার দুধের কার্যকারিতা উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু আমরা কি জানি পাউডার দুধে অ্যালার্জি আছে কি না ? আপনার জন্য এটা কেমন প্রভাব ফেলবে। আমরা জানি গরুর দুধে প্রায় ২০ রকমের অ্যামাইনো এসিড থাকে। এদের মধ্যে আলফা ল্যাকটো গ্লোবুমিন, বোভাইন সিরাম আল্বুমিন, কেসিন ইত্যদি।

এগুলো অ্যালার্জির জন্য বেশি দায়ি। বাজারজাত করা পাউডার দুধে এই সকল এসিড থাকে যেটা খাওয়ার কারণে আপনার অ্যালার্জি হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। শিশুদের ক্ষেত্রে অ্যালার্জির কারণে চুলকানি, পরিপাক এর মত সমস্যা হতে পারে।

বাসি দুধ খাওয়ার অপকারিতা

আমরা জানি দুধের অনেক উপকারিতা আছে কিন্তু সেই দুধ যদি বাসি হয় তাহলে কি হবে। আমাদের মাঝে অনেকেই মনে করে যে তাজা দুধে যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে বাসি দুধেও একই উপাদান থাকতে পারে না। এটা একটি ভুল ধারণা মাত্র। দুধের উপাদান কখন কম বেশি হয় না সব সময় একই উপাদান থাকে তবে বাসি দুধের কার্যকারিতা একই না হতে পারে। তাই আমাদের উচিত তাজা ,খাটি দুধ পান করার চেষ্টা করা।

লেখকের মন্তব্য

উপরিক্ত আলোচনা থেকে আমরা দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। তথ্যগুলো যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের সাথেই থাকুন আর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান সেটা কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। আর পোস্টটি বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদের জানতে সাহায্য করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url