মানসিক রোগী কারা, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমরা নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হই তার মধ্যে হতাশ এবং দুশ্চিন্তা অন্যতম। দুশ্চিন্তা করতে করতে আমরা আবার মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছি না তো । আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের মধ্যে দেখা গেলে ধরে নিবো যে আমরাও মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছি।
মানসিক রোগ বলতে মস্তিষ্কের বিকার ঘটা অস্বাভাবিক আচরণ করাকে ধরে নেওয়া হয়। একজন মানুষের আচার-ব্যবহারের পরিবর্তন,চিন্তাভাবনার পরিবর্তন তার অনুভূতির পরিবর্তন বুদ্ধি ও সৃতিশক্তির পরিবর্তন এগুলোই মানসিক রোগীর মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।

ভূমিকা

মানসিক রোগের জৈবিক কারণ এখনও পূর্ণরূপে আবিষ্কার হয়নি। মানসিক রোগের ক্ষেত্রে চারপাশের পরিবেশ, বংশগত এমনকি সমাজ ও শিক্ষার প্রভাব থাকতে পারে। যেহেতু মানসিক রোগ বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে সেহেতু এই রোগের কারণও ভিন্ন ভিন্ন কারণে হয়ে থাকে।

মানসিক রোগ কাকে বলে ?

আমারা সামাজিক জীব। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের নানা সমস্যা , ঘাত-প্রতিঘাত, প্রতিকুল পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলতে হয়।মানুষের অস্বাভাবিক আচরণ,অনুভূতি, দুশ্চিন্তা, অস্বাভাবিক জীবনযাপনই হচ্ছে মনোরোগ বা মানসিক রোগ যা ব্যাক্তিকে খারাপের দিকে নিয়ে যায়। 

শারীরিক স্বাস্থ্যের মত আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। অতএব আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। আপনি যদি মানসিক স্বাস্থ্য সচেতন হতে চান তাহলে এই আর্টিকেল গুলো মন দিয়ে পড়ুন।

মানসিক রোগের নামসমূহ

মানসিক রোগ সাধারণত বাক্তিগত জীবন , সামাজিক জীবন ,পারিবারিক জীবন অব্যাহত হয়। আবার অনেক মানসিক রোগ বংশগত কারণেও হয়। আমাদের দেশের অনেক মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত। মানসিক রোগকে সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
১। সাইকোসিস
২। নিউরোটিক
সাইকোসিস হচ্ছে সবচেয়ে গুরুতর মানসিক রোগ। বাংলাদেশর অনেক মানুষ এই মানসিক রোগ এ আক্রান্ত। বংশগতিও কারণেও আই রোগ হতে পারে।
নিউরোটিক মানসিক রোগের আর একটি নাম। এই রোগের রোগীরা সাধারণত বাস্তবতাবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।

মানসিক রোগ হলে কীভাবে বুঝবো ?

মানসিক রোগের অনেক লক্ষণ আছে। তবে উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনি একজন মানসিক রুগী।
  • খাবারে অরুচি
  • দিনের বেলায় শরীর ক্লান্ত হয়
  • অনিয়মিত ঘুম
  • অনেক সময়ই মন খারাপ থাকে
  • ছোট বিষয়ে রেগে যাওয়া
  • কাজে অনাগ্রহ
  • নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা বেশি করা
  • বিষণ্ণতা/ দুশ্চিন্তা বেশি করা
  • অমনোযোগী ও সিধান্তহীনতাই ভোগা
  • হুট করেই বুক ধড়ফড় করা
  • বিরক্ত ও খিটখিটে মেজাজ
  • হতাশ ও অপরাধবোধ
  • আত্মহত্যা চিন্তে করা
  • আত্মবিশ্বাস কমে যায়
  • নিজের যত্ন না নিয়া
  • বন্ধুবান্ধবদের এড়িয়ে চলা

মানসিক রোগ কি বংশগত ?

মানসিক রোগী মা বাবার সন্তানরা মানসিক রোগী হতে পারে। মানসিক রোগ জিনের মাধ্যমে সন্তান সন্তনিতে পারাপার হতে পারে। মানসিক রোগ নিয়ে আমাদের অনেক ভুল ধারণা আছে যেমন আত্মা বা শয়তান আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে মানসিক রোগ হয়। গ্রামের মানুষ তখন ওঝা, কবিরাজ দিয়ে তন্ত্র মন্ত্র করা ফুঁ দিয়ে নেয়। মানসিক রোগ অন্যান্য শারীরিক রোগের মত বাস্তবিক একটা রোগ। যেকোনো বয়সের মানুষের এই রোগ হতে পারে।

মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণগুলো

  • ঘুমিয়ে পড়তে সমস্যা কেউ যদি মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকে তাহলে তার ঘুমাতে অসুবিধা হবে। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া, ঘুম থেকে উঠা এগুলো সমস্যা হবে
  • খিটখিটে মেজাজ যারা মানসিক সমস্যাই ভুগছেন এমন মানুষের মেজাজ অনেক খিটখিটে প্রকৃতির হয় । যেকোনো বিষয়ে রাগটা অনেক বেড়ে যায়।
  • শরীর দুর্বলতাবোধ কেউ যদি সারাদিন দুর্বলতা অনুভব করে, শরীর ক্লান্ত লাগে কাজের প্রতি আগ্রহ থাকে না ,কাজে যেতে ইচ্ছে করে না তাহলে বুঝে নিবেন আপনি মানসিক সমস্যাই ভুগছেন।
  • এগুলো ছাড়াও খুদামন্দা মানে খেতে ইচ্ছে না করা, নিজের জীবনের প্রতি কোন আগ্রহ না থাকা আরও অনেক শারীরিক সমস্যা( মাথা ব্যথা, মাথাঘোরা ,রিদস্পন্দন বেশি ) এগুলো সবই মানসিক রোগীর শারীরিক লক্ষণ।

মানসিক রোগের মুক্তির উপায়

  • বন্ধুদের সাথে মেলামেশা, আড্ডা দিন
  • নিজেকে যেকোনো কাজ এ ব্যাস্ত রাখা
  • নিয়মিত খেলাধুলা করা
  • নিজের কাজকে ভালবাসা
  • নেশাদ্রব , মাদক থেকে নিজেকে দূরে রাখা
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়া
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
  • নিয়মমাফিক জীবনযাপন করা
  • অন্যের কুপরামর্শ না নেওয়া
  • বর্তমান কাজে মনোযোগ দেওয়া
  • পরিবারের লোকদের সাথে সবকিছু শেয়ার করা
  • মানসিক চাপ কমানো
  • যেকোনো বিষয় নিয়ে বেশি না ভাবা
  • ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা

লেখকের মন্তব্য

উপরিক্ত আলোচনা থেকে আমরা মানসিক রোগীর কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার সম্পর্কে জেনেছি। লক্ষণগুলো যদি আপনার অথবা আপনার পরিবারের কোন ব্যাক্তির মধ্যে পরিলক্ষিত হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তথ্যগুলো যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের সাথেই থাকুন আর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান সেটা কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। আর পোস্টটি বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদের জানতে সাহায্য করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url