এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি। অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৮ লক্ষণে
আপনি কি তীব্র পেট ব্যথায় ভুগছেন? ব্যথাটা কি আপনার নাভির চারিদিক ঘিরে এবং তলপেট থেকে হচ্ছে ? যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে আপনি অ্যাপেন্ডিক্স নামক সংক্রমনের সংক্রমিত হয়েছেন। আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা জানব এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি এবং যেকোনো ব্যথা অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৮ লক্ষণে। আমরা আরো জানবো এপেন্ডিসাইটিস কেন হয়, এপেন্ডিসাইটিস হলে করণীয়, এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন খরচ, এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয় এবং এপেন্ডিসাইটিস এর ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত।
আপনি যদি এপেন্ডিসাইটিস নামক সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আজকে আর্টিকেলটি আপনার জন্য কেননা আজকে আর্টিকেলে আমরা এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ, সমস্যা এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এপেন্ডিসাইটিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পুন্ন পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি ?
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলো মানুষের শরীরের অন্ত্রের সাথে যুক্ত একটি ছোট থলি, যা দেখতে অনেকটা একটা পাতলা নলের মত। এটি সাধারণত পেটের নিচের ডান দিকে বৃহদন্তের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং সাধারণ কোনো কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। অর্থাৎ এপেন্ডিসাইটিস হলো অ্যাপেন্ডিক্সের ফোলা অংশ বা প্রদাহ। এর সাধারণত খুব একটা বেশি লক্ষণ প্রকাশিত হয় না।
বেশিরভাগ রোগী কোন লক্ষণ নিয়ে আসতে পারে না। তাই অনেকেই বুঝতেই পারেনা যে কোনটি অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা এবং কোনটি অন্য ব্যাথা। অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেলে পুরো শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রদাহ হয় ও সেপসিস হতে পারে। অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ গুলো হল:
- তলপেটের ডান পাশে ব্যথা
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- ক্ষুধামন্দা কমে যাওয়া
- জ্বর আসা
- ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
- পেট ফেঁপে যায়
- চাপ লাগলে ব্যথা বাড়ে
- মূত্র থেকে অসুবিধা হতে পারে
যদিও উপরিক্ত লক্ষণগুলো আপনার মধ্যে প্রকাশ পায় তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কেননা সময় মত এপেন্ডিসাইটিস এর চিকিৎসা না করালে যেকোনো সময় এটি ফেটে পুরো শরীর সংক্রমিত হতে পারে। আজকে আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি এবং অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৮ লক্ষণে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। আমরা ইতিমধ্যেই এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ সম্পর্কে জেনে গেছি।
অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৮ লক্ষণে
অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা সেটা বোঝার জন্য কিছু কিছু লক্ষণ রয়েছে। এখন আমরা সেই লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানব যে লক্ষণ গুলো প্রকাশ ফেলে আমরা বুঝে নেব যে আপনার অ্যাপেন্ডিক্স হয়েছে নাকি অন্য কোন ব্যথা। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এপেনডিক্স এর ব্যথা কিনা সেটা বোঝার ৭ লক্ষণ:
১। তলপেটের ডান পাশে ব্যথা
প্রথমে নাভির আশেপাশে ব্যথা শুরু হয়। তারপরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ব্যথা পুরো তলপেট জুড়ে হতে থাকে এবং শেষে ডান পাশে ব্যথা স্থায়ী হয়।
২। বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
তলপেটে তীব্র ব্যথার কারণে বমি বমি ভাব অথবা অনেক সময় বমিও হতে পারে।
৩। ক্ষুধামন্দা
খাবারের প্রতি অনিহার সৃষ্টি হতে পারে। খাওয়ার ইচ্ছা কমে যেতে পারে অর্থাৎ একেবারেই না থাকতে পারে।
৪। হালকা জ্বর
তীব্র তলপেট ব্যথা হওয়ার কারণে হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার জ্বর হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত ৯৯°-১০১°F হতে পারে।
৫। ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হতে পারে আবার কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে। ব্যক্তিভেদে আলাদা আলাদা হতে পারে।
৬। পেট ফেঁপে যায়
পেট গ্যাসে পরিপূর্ণ হয়ে ফেঁপে যেতে পারে। অথবা পেটে চাপ ধরে থাকতে পারে যেন পেটভরা অনুভব হয়।
৭। চাপ লাগলে ব্যথা বাড়ে
শুরুতে হালকা ব্যথা থাকলেও কয়েক ঘন্টার মধ্যে তা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায়। হাঁটাচলা, কাশি দেওয়া কিংবা পেটে চাপ দেওয়ার সাথে সাথে ব্যথা তীব্র হতে পারে।
৮। মূত্র থেকে অসুবিধা
অনেক সময় মূত্র থেকে অসুবিধা হতে পারে। তবে ব্যক্তিভেদে নাও হতে পারে।
উপরিক্ত লক্ষণগুলো ব্যক্তিভেদে কম-বেশি কিংবা আলাদা আলাদা হতে পারে। উপরোক্ত লক্ষণগুলো যদি আপনার মাধ্যমে প্রকাশ পায় তাহলে দ্রুত নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
এপেন্ডিসাইটিস কেন হয় ?
এপেন্ডিসাইটিস সাধারণত অ্যাপেন্ডিক্স নামক অঙ্গটি সংক্রমিত হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। অ্যাপেন্ডিক্স হলো আমাদের শরীরের বৃহদন্তের সাথে যুক্ত একটি ছোট্ট থলির মত অথবা নলের মত অঙ্গ। অ্যাপেন্ডিক্সে কিছু বিশেষ কারণে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়। যেমন:
- অ্যাপেন্ডিক্সে ব্লকেজ বা অ্যাপেন্ডিক্স এর মুখে বাঁধা
- লিম্ফয়েড হাইপারপ্লেসিয়া লিম্ফ টিস্যু ফুলে যাওয়া
- টিউমার বা প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগ
- ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ
- পেটে আঘাত জনিত সমস্যা
উপরিক্ত কারণগুলোর জন্য সাধারণত এপেন্ডিসাইটিস হয়। তাই আমাদের এপেনডিক্স থেকে বাঁচতে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করে চলা উচিত। আমরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছি এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি এবং অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৮ লক্ষণে সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
এপেন্ডিসাইটিস হলে করনীয়
এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে সহ্য করাই অসম্ভব। তাই এপেন্ডিসাইটিস হলে দ্রুত কিছু কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে আর দেরি করা উচিত নয়। এপেন্ডিসাইটিস হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। সম্ভব হলে অপারেশন করিয়ে নিন। এপেন্ডিসাইটিস হলে করণীয় কিছু পদক্ষেপ হলো:
- উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন
- নিজ থেকে কোন ঔষধ খেতে যাবেন না
- ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন
- হাতুড়ি চিকিৎসক দ্বারা কোন চিকিৎসা গ্রহণ করবেন না
- সম্ভব হলে দ্রুত অপারেশন করুন
- অপারেশনের পূর্বে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করুন
- নিয়মিত ফাইবারযুক্ত খাবার খান
- অপারেশনের পর নির্দিষ্ট সময় বিশ্রাম নিন
- পরিষ্কার পরিছন্নতা বজায় রাখুন
- সময় মত অপারেশন করলে দ্রুত সুস্থতা ফিরে আসে
এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে উপরোক্ত করণীয় কাজগুলো করতে পারেন। মনে রাখবেন কোন রোগী ছোট নয়। তাই কোন রোগকে এবং ছোট ছোট উপসর্গগুলোকে কোন সময় অবহেলা করবেন না।
এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন খরচ
এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণগুলো যদি আপনার মধ্যে প্রকাশ পায় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর অপারেশন করাই অধিক শ্রেয়। আমরা ইতিমধ্যেই উপরিক্ত তথ্য থেকে এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি এবং অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৮ লক্ষণে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জেনেছি। এখন আমরা জানবো এপেনডিক্স এর অপারেশন খরচ কেমন সে সম্পর্কে। আসলে এপেনডিক্স এর অপারেশন খরচ বিভিন্ন হাসপাতালের অবস্থা, সেবা, অভিজ্ঞ ডাক্তার ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে।
আবার অনেক সময় রোগীর ধরন, রোগীর বয়স, অন্যান্য অসুখ, রোগীর স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা খরচ খুবই কম কেননা সেখানে আলাদা কোনো ফ্রি দেওয়া লাগে না শুধুমাত্র ঔষধ এবং অপারেশনের বিভিন্ন ইনজেকশন বাইরে থেকে কেনা লাগে। আর অপারেশন খরচ খুবই কম। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলোর পরিবেশ অনেকটাই অস্বাস্থ্যকর থাকে। আবার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা অনেক সময় সাপেক্ষ। তাই অ্যাপেন্ডিক্স এর মত জটিল চিকিৎসার জন্য সম্ভবত দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ায় শ্রেয়।
অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা খরচ অনেকটা বেশি। এখানে চিকিৎসা খরচ ২৫০০০- ৫০০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আবার জেলাভিত্তিক ছোট ছোট ক্লিনিক গুলোতে চিকিৎসা খরচ ১৫০০০-৩০০০০ এর মধ্যে হয়ে থাকে। তার মধ্যে অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ, যন্ত্রপাতি, ইনজেকশন ইত্যাদি মিস টাকায় সরবরাহ করতে হবে। আশা করছি অ্যাপেন্ডিক্স এর অপারেশন খরচ কত সে সম্পর্কে আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
এপেন্ডিসাইটিস এর ঔষধ
এপেন্ডিসাইটিসের ঔষধগুলো সাধারণত সংক্রমক নিয়ন্ত্রণ ও ব্যথা নাশক হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রধান ওষুধ গুলো হল অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথানাশক।
এন্টিবায়োটিক
- ceftriaxone
- Piperacillin + Tazobactam
- Metronidazole ইত্যাদি।
ব্যাথানাশক
- paracetamol
- ibuprofen
- Tramadol
উপরে তো ওষুধগুলো সাধারণত এফেন্ডিসাইটিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তবে যে কোন ওষুধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন এন্টিবায়োটিক কিংবা ব্যাথানাশক ঔষধ সেবন করা উচিত নয়।
এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয় ?
প্রিয় পাঠক উপরিক্ত আলোচনা থেকে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি এবং অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৮ লক্ষণে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। কিন্তু অনেকেই জানে না এপেন্ডিসাইটিস শরীরের কোন পাশে হয়ে থাকে। তবে জেনে রাখা ভালো যে এপেন্ডিসাইটিস আমাদের শরীরের ডান পাশে হয়ে থাকে। অর্থাৎ আমাদের নাভি থেকে তলপেটের ডানদিকের অংশে এপেন্ডিসাইটিস হয়।
শেষকথা
আজকে আর্টিকেল থেকে আমরা জেনেছি এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি এবং যেকোনো ব্যথা অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা কিনা বুঝে নিন ৮ লক্ষণে। আমরা আরো জেনেছি এপেন্ডিসাইটিস কেন হয়, এপেন্ডিসাইটিস হলে করণীয়, এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন খরচ, এপেন্ডিসাইটিস কোন পাশে হয় এবং এপেন্ডিসাইটিস এর ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত।
সর্বোপরি আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাকে ভালো লেগে থাকে এবং আর্টিকেল পড়ে যদি বিন্দুমাত্র উপকৃত হন তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। যে সকল বন্ধু-বান্ধব দীর্ঘদিন ধরে তীব্র পেট ব্যথায় ভুগছে এবং লক্ষণগুলো প্রকাশ পাচ্ছে তাদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করে তাদের এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করুন।
রাজশাহীি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url