অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার যেসব রোগের উৎপত্তি ঘটায় বিস্তারিত জানুন

বর্তমান সময়ে কম্পিউটার অতিপ্রয়োজনীয় একটি ডিভাইস। ডিজিটাল এই যুগে কম্পিউটার ছাড়া চলা অসম্ভব। কিন্তু আমরা কি জানি অতিরিক্ত কম্পিউটারের ব্যবহার আমাদের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে। কম্পিউটার যেমন আমাদের জন্য অনেক উপকারী ঠিক তেমনি অতিরিক্ত কম্পিউটারে ব্যবহার আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আজকের পোস্টে আমরা জানবো, অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার যেসব রোগের উৎপত্তি ঘটায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
কম্পিউটার ব্যবহার করা উচিত কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মতভাবে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ব্যবহার নিশ্চিত না করলে শরীরে নানারকম জটিলতা সৃষ্টি হবে। মাত্রারিক্ত কোন কিছুই ভালো না। তাই আমাদের কম্পিউটার ব্যবহারের লিমিট যেন অতিরিক্ত না হয় সেদিক খেয়াল রাখতে হবে।

ভূমিকা

ডিজিটাল যুগে প্রতিটি কাজের জন্য আমরা কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি। কাজের ব্যস্ততায় আমরা প্রতিদিন অনেক সময় কম্পিউটারের স্ক্রীনের দিকে তাকাই থাকি। কিন্তু ডাক্তাররা বলেন, দৈনিক ৪ ঘণ্টার বেশি সময় কম্পিউটার চালালে মানসিক সমস্যা হতে পারে। অধিক সময় কম্পিউটারের স্ক্রীন দেখলে চোখের ও ব্রেনের সমস্যার পাশাপাশি অধিক সময় বসে থাকার কারণে আপনার কোমরের ব্যথাসহ আরও নানারকম শারীরিক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তাই আমাদের অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহারের প্রতি সচেতন হতে হবে। আমাদের মাঝে অনেকই কম্পিউটারে নানা রকম কাজ করে প্রায় সব ধরণের কাজের জন্য দীর্ঘক্ষণ কপিউতারের দিকে তাকাই থাকতে হয়। বিশেষ করে যারা ফ্রীল্যান্সিং করে তাদের কাজটা একটু বেশি হয় যার কারণে অনেক সময় কম্পিউটারের ডিসপ্লের দিকে এককালীন বসে থাকতে হয় দিয়ে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়।

আপনি যদি প্রচুর কম্পিউটারের কাজ করে থাকেন তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ আজকের পোস্টে আমরা অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার যেসব রোগের উৎপত্তি ঘটায় সে সম্পর্কে এবং কম্পিউটার ব্যবহারের কিছু নীতিমালা সম্পর্কে জানবো।

অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার যেরকম ক্ষতি করে 

কম্পিউটার আমাদের জীবনের অনেক জটিল সমস্যার সমাধান দেয়। বর্তমান সময়ে প্রতিটি ঘরে একটি কম্পিউটার থাকা বাঞ্ছনীয়। কম্পিউটার আমাদের দৈনন্দিন জিবঙ্কে অনেক সহজ করে দিয়েছে। অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ প্রতিটি সেক্টরে কাজ করার জন্য কম্পিউটার বাধ্যতামূলক। আবার আমরা যারা কম্পিউটারে কাজ করে টাকা ইনকাম করি অর্থাৎ ফ্রীলান্সিং করি তাদের জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এতো এতো কাজের জন্য আমাদের দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে সামনে একনাগাল বসে থাকতে হয় যার কারণে আমাদের মনের অজান্তেই নানা রকম শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। তাই বেশিক্ষণ কম্পিউটারের সামনে আমাদের বসে থাকা উচিত নয়। কাজের মাঝে আমাদের ব্রেক দিতে হবে। 

অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার যেসব রোগের উৎপত্তি ঘটায় 

এখন আমরা জানবো অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার করলে কি ধরণের রোগ হয় সে সম্পর্কে এবং সমস্যার প্রতিকার সম্পর্কে। 

  • পেশির সমস্যা
  • চোখের সমস্যা
  • মাথাব্যথা
  • স্থুলতা
  • ঘাড়, আঙুল ও কাঁধ ব্যথা
  • অতিরিক্ত কাজের চাপ
  • কোমরে ব্যথা
  • চোখের নিচে কালো দাগ
  • মানসিক চাপ সৃষ্টি
  • মেজাজ খিটখিটে
  • ক্ষুধামন্দা
আমরা এতক্ষণ জানলাম যে, অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার যেসব রোগের উৎপত্তি ঘটায়। এখন আমরা উক্ত রোগ সম্পর্কে এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

১। পেশির সমস্যা

যারা বেশি কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকে তাদের সবারই কমবেশি এই সমস্যাটি আছে। এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করলে হাত, পা, ঘাড়, কনুই, পিঠে এই সমস্যা হতে পারে। সাধারণত বসার জাইগা ঠিক না থাকলে এই সমস্যাগুলো বেশি হতে পারে।

প্রতিকার
প্রথমত আপনার বসার চেয়ার ভালো হতে হবে যেন অনেক সময় বসে থাকলেও সমস্যা না হয়।
কম্পিউটার মনিটর এবং চেয়ার ভালো করে সেট করতে হবে যেন সোজা হয়ে বসে কাজ করতে পারেন।

  • পা দুইটা সোজা করে পুরা শরীর সোজা করে বসতে হবে।
  • মেরুদণ্ডের হাড়ে যেন সমস্যা না হয় তাই মেরুদণ্ড সোজা করে বসতে হবে।
  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কাজের ফাঁকে উঠে হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
২। চোখের সমস্যা
দীর্ঘদিন ও দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার ব্যবহার করার ফলে আমাদের চোখে নানারকম সমস্যা দেখা দেয় এগুলোকে কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম বলে। কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে চোখ জ্বালাপড়া করা, চোখ চুলকানো, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া এবং চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া।

প্রতিকার
  • প্রথমত মনিটরের স্ক্রীনের আলো একটু কমায় দিবেন।
  • এক দৃষ্টিতে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না।
  • চোখ থেকে মনিটর একটি নিদিষ্ট দূরে ( ৫০- ৬০ সেন্টিমিটার ) রাখতে হবে।
  • রুমে কম্পিউটার ছাড়াও আরও বাল্ব দিয়ে রাখুন যেন ফোকাস শুধু স্ক্রীনের না লাগে।
  • একদৃষ্টি এড়াতে স্ক্রিনটি সামান্য কাত করে রাখুন।
৩।মাথাব্যথা
মাথা ও ঘাড়ের পেশি ঠিক মতো সঞ্চালন না হলে মাথাব্যথা করে। অনেকক্ষণ কম্পিউটারে বসে থাকলে উক্ত সমস্যাটি হয়ে থাকে।

প্রতিকার
কাজ করার পাশাপাশি একটু রেস্ট করুন। ঘাড় সোজা রেখে কাজ করুন। নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করুন।

৪। স্থুলতা
এককালীন বসে থাকলে এবং শরীর কম নড়াচড়া করলে স্থুলতা হতে পারে। এই সমসার কারণে শরীরের নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কাজ করার সময় একটু আদিক সেদিক কোমর ঘুরিয়ে নিতে হবে।

প্রতিকার
বাচ্চাদের গেম খেলার সময় বেশিক্ষণ বসে না থাকতে দেওয়া। বড়দের কাজ করার সময় নড়াচড়া করা এবং অধিক সময় কাজের পর একটু বিশ্রাম নেওয়া। ঘন ঘন হাঁটাচলা করা এবং কাজের সময় শরীর নড়াচড়া করানো।

৫। ঘাড়, আঙুল ও কাঁধ ব্যথা
কাজের ব্যস্ততায় অনেক সময় ধরে মাউস এবং কিবোর্ড চাপাচাপি করার কারণে হাতের আঙুল অনেক ব্যথা হয়। । কব্জি ও আঙুলে কার্পাল টানেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার কিবোর্ড নিয়ে লিখালিখি করার সময় একটানা কাজে ঘাড় ও কাঁধ ব্যথা হয়ে যাইতে পারে।

প্রতিকার
  • মাউস ব্যবহার করার সময় কবজি ও হাত একসাথে ব্যবহার করতে হবে।
  • লিখার সময় হালকা করে লিখুন। হাত অন্য দিকে একটু নড়াচড়া করান।
  • যখন টাইপ করবেন না, তখন কি বোর্ড থেকে হাত সরান, হাতটাকে স্ট্রেচ করুন।
৬। অতিরিক্ত কাজের চাপ
অতিরিক্ত কাজের ফলে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের স্বাস্থ্য ভাঙাতে থাকে।

প্রতিকার
কাজের চাপ বেশি নেওয়া যাবেনা। যদিও কাজের অনেক চাপ আসে তাহলে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

৭। কোমরে ব্যথা
কম্পিউটার ব্যবহারকারী ৮০% মানুষের কোমর ব্যথার সমস্যা আছে। অনেক সময় বসে থাকার কারণে কোমরের হাড়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। কোমরের হাড় ক্ষয়ে যায় অনেকের আবার। আমাদের ব্যবহৃত চেয়ার যদি ভালো মানের না হয় তাহলে এই সমস্যা বেশি হতে পারে।

প্রতিকার
কাজের ফাঁকে ফাঁকে উঠে বসে থাকতে হবে। মাঝে মাঝে কাজের ব্রেক দিতে হবে দিয়ে বাইরে একটু ঘোরাফেরা করতে হবে। আপনার বসার জন্য চেয়ার নির্বাচন করতে হবে ভালো করে। ভালো মানের চেয়ার বাজারে পাওয়া যায় যেগুলোতে বসে আপনি আরামে কাজ করতে পারবেন।

৮। চোখের নিচে কালো দাগ
অনেকে মনে করে রাত জাগলে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে কিন্তু ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার প্রধান কারণ হল ডিসপ্লের দিকে দীর্ঘসময় তাকিয়ে থাকা। স্ক্রীনের থেকে আগত রশ্মি আমাদের চোখের নিচে কালো দাগের মূল কারণ। সারারাত মোবাইলের দিকে এবং কম্পিউটারের দিকে তাকায় থাকলে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে।

প্রতিকার
এই সমস্যা সমাধানের একটিই উপায় সেটি হচ্ছে কম্পিউটারের ব্যবহার কমানো। তাছাড়া কম্পিউটারের স্ক্রীনের আলো একটু কমায় দিলে রশ্মিটা খুব বেশি চোখে পড়বে না। আর নাহলে কম্পিউটার ব্যবহার করলে চশমা ব্যবহার করতে পারেন কেননা চশমা এই রশ্মি থেকে চোখকে বাচাতে সাহায্য করে।

৯। মানসিক চাপ সৃষ্টি
একটানা এক জায়গায় বসে থাকলে একটি মানুষ এমনিতেই মানসিক রোগী হয়ে যাবে। কাজ করতে করতে আর স্ক্রীন দেখতে দেখতে আমরা মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছি।

প্রতিকার
কাজের স্থান পরিবর্তন করুন। কাজের মধ্যে ব্রেক দিন। সময় নিয়ে পরিবারের কারো সাথে একটু কথা বলুন হাসাহাসি করুন।

১০। ক্ষুধামন্দা
সারাদিন একটানা একটি কাজের প্রতি যদি আপনার ফোকাস থাকে তাহলে আপনি খাওয়ার সময় ভুলে যাবেন। যদিও আপনি খান কিন্তু সময়মত একদিনও খেতে পারবেন না, এতে করে খাবারের অনিয়মের কারণে আপনার খুদা অনেক কমে যাবে। খাবারের প্রতি রুচি কমে যাবে এতে আপনার শরীর দিন দিন রোগা পাতলা হয়ে যাবে।

প্রতিকার
মোবাইলে অ্যালার্ম সেট করে রাখুন। খাওয়ার সময় সময় যেন আপনি বুজতে পারেন। নিয়মিত এইভাবে কইদিন খান তাহলে দেখবেন ভালো অভ্যাস হয়ে গেছে এবং খারাপ অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে গেছে।

শেষকথা

পরিশেষে বলা যায় যদিও আমরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি তবুও আমাদের স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। কম্পিউটার ব্যবহার করার ফলে যেন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার সম্মুখীন না হই সেদিক আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। কম্পিউটারের ভালো দিক এবং খারাপ দিক সম্পর্কে জানতে হবে। অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার যেসব রোগের উৎপত্তি ঘটায় সে সম্পর্কে জানতে হবে।

অতঃপর পোস্টটি ভালো লাগলে ফলো দিয়ে পাশেই থাকবেন। আমরা নিয়মিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পোস্ট লিখে থাকি তাই নিয়মিত আমাদের পেজটি ভিজিট করবেন। যেসব বন্ধুরা বেশি কম্পিউটার চালাই তাদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করে তাদের অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার যেসব রোগের উৎপত্তি ঘটায় সে সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url