তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী, নিয়ত ও দোআ সম্পর্কে জানতে পোস্টটি পড়ুন

নামাজ বেহেশতের চাবি। অর্থাৎ কোন ব্যাক্তি নামাজ ছাড়া বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আমাদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও আমাদের কিছু কিছু নামাজ আদায় করতে হয় তার মধ্যে তাহাজ্জুদ অন্যতম। আজকের পোস্টে আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী, নিয়ত ও দোআ সম্পর্কে জানতে পারবো।
আপনি যদি তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে না জানেন তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য তাই এই বিষয়ে জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।

তাহাজ্জুদ নামাজ

তাহাজ্জুদ একটি আরবি শব্দ এর অর্থ হচ্ছে রাতের ইবাদত অর্থাৎ ঐচ্ছিক ইবাদত অথবা ঘুম থেকে জাগা। আমাদের ওপর আল্লাহ্‌ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছে। তার মানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রত্যেক মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক। নামাজ হল বেহেশতের চাবি। নামাজ ছাড়া বেহেশতে প্রবেশ করা যাবেনা। আল্লাহ্‌ বিচারের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসেব নিবেন।

তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। ফরজ ইবাদত মানে যে কাজটি আপনাকে করাই লাগবে না করলে পাপ হবে। আর নফল ইবাদত হল আপনি পড়লে সওয়াব পাবেন কিন্তু না পড়লে পাপ হবে না। তাহাজ্জুদের নামাজ একটি নফল ইবাদত। তাই আমাদের বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে।আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী, নিয়ত ও দোআ সম্পর্কে জানতে পারবো আজকের পোস্টে।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

আমাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে তাহাজ্জুদের নামাজ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। আমাদের প্রিয় নবি তাই কোনদিনও তাহাজ্জুদ নামাজ পরা থেকে বিরত থাকেনি। নবির উম্মত হিসেবে আমাদের ওপর তাহাজ্জুদ ফরজ করা হয়নিও এটা আমাদের জন্য নফল ইবাদত অর্থাৎ করতে পারলে অনেক সওয়াব কিন্তু না করতে পারলে গুনাহ নাই।
 
আমাদের প্রিয় নবি করীম (সাঃ) ৪ রাকআত , ৮ রাকআত , কখনো ১২ রাকআত নামাজ পড়তেন। কোন ব্যাক্তি যদি এশার পর ২ রাকআত নামাজ পড়ে তাহলে সেটা তাহাজ্জুদ নামাজ বলে গণ্য হবে। সাধারণ নামাজের মত তাহাজ্জুদ নামাজকের সূরা এবং দোয়া একই রকম। আপনি চাইলে ছোট সূরা দিয়ে নামাজ শেষ করতে পারেন কিন্তু লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু দিয়া তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম। এখন আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানবঃ

  • তাকবীর তাহরিমা `আল্লাহু আকবার` বলে নিয়ত করা।
  • ছানা পড়া ( যেকোনো হতে পারে )।
  • সূরা ফাতিহা পড়া।
  • যেকোনো একটি সূরা বা কেরাত পড়া।
  • আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যাওয়া।
  • রুকু শেষে অন্য নামাজের ন্যায় সিজদা করা।
  • একইভাবে দ্বিতীয় রাকআত শেষ করা।
  • শেষ বৈঠকে বসে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করা।
  • দুই রাকআত শেষে আবার একইভাবে দুই দুই রাকআত করে ৮ রাকআত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উত্তম।
উপরিক্ত নিয়মে আমাদের তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উচিত। নিয়মিত নফল ইবাদত করা উচিত।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের একটি নিদিষ্ট সময় আছে। যেকোনো সময় পড়লে হবে না। তাহাজ্জুদ অর্থ হচ্ছে ঘুম থেকে জাগা অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে এটা রাতের ইবাদত। সবাই যখন গভীর ঘুমে মগ্ন তখন আপনি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবেন। অনেকে এশার নামাজ শেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে। তবে গভীর রাত মানে রাত ১২ টার পর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম। রাত ১২টা থেকে ফজর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার আগে আমাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী, নিয়ত ও দোআ সম্পর্কে জানতে হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত

আমরা জানি নিয়ত অর্থ সংকল্প করা অর্থাৎ কোন কাজের জন্য মনস্থির করা। প্রতিটি কাজের মত নামাজ পড়ার জন্য নিয়ত করতে হয়। মনে মনে যে নামাজ পড়বেন ঐ বিষয়ে সংকল্প করবেন। 
উচ্চারণঃ নাওয়াইতুন আন উসাল্লি রাক,আতাই তাহাজ্জুদি।
বাংলাঃ আমি কেবলা মুখি হয়ে দুই রাকআত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করছি।

এইভাবে প্রতি দুই রাকআত অন্তর অন্তর আপনাকে উক্ত নিয়ত করে নামাজ আদায় করতে হবে।

তাহাজ্জুদ নফল ইবাদত নাকি সুন্নত?

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, তাহাজ্জুদ নফল ইবাদত নাকি সুন্নত নাকি ফরজ ? তার পূর্বে আমাদের সুন্নত, নফল এবং ফরজ ইবাদত সম্পর্কে জানতে হবে। সুন্নাত হচ্ছে যেগুলো কাজ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ ( সাঃ) করে গেছে। অর্থাৎ নবী করীম ( সাঃ) এর বৈশিষ্ট্য, চালচলন, আচার ব্যবহার ইত্যাদি কাজ করা। উক্ত কাজগুলো করলে নবির আদর্শ মনে ধরে রাখা হয় এতে আল্লাহ্‌ অনেক খুশি হয়। নবির সুন্নত মানলে নবী করীম (সাঃ) আমাদের কিয়ামতের দিন শাফায়াত করে জান্নাতে নিবে। তাই আমাদের উচিত সুন্নত গুলো ভালো করে পালন করা। 

নফল ইবাদত হচ্ছে ঐ কাজ যেগুলো করলে আপনি অধিক সওয়াব পাবেন কিন্তু না করলে কোন পাপ বা গুনাহ হবেনা। এটা অনেকটা ওভার ডিউটির মত আপনি বেশি কাজ করলে বেশি টাকা পাবেন না করলে মালিকের কোন জোর নেই। তাহাজ্জুদ নামাজ একটি নফল ইবাদত। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ার পর কেউ অতিরিক্ত কিছু নামাজ পড়লে সেটা নফল ইবাদত হবে। আপনি রমজান মাস ব্যাতিত অন্য মাসে সিয়াম পালন করলে সেটি নফল ইবাদত হবে। 

ফরজ ইবাদত হচ্ছে যে কাজগুলো আপনার জন্য বাধ্যতামূলক। মানে যে ইবাদত না করলে আপনার পাপ বা গুন্নহা হবে সে ইবাদতকে বুঝাই। যেমন আমাদের ওপর পাঁচওয়াক্ত নামাজ ফরজ, রমজান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ, সম্ভব হলে যাকাত দেওয়া ফরজ, হজ করা ফরজ ইত্যাদি ফরজ ইবাদত রয়েছে। উক্ত ফরজ ইবাদত না করলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এবং আমাদের ওপর শাস্তি আরোপ করে। তাই আমাদের সকলের উচিত ফরজ ইবাদতগুলো করা। পাশাপাশি সুন্নত ও নফল ইবাদত করতে হবে। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী, নিয়ত ও দোআ সম্পর্কে জানতে হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকআত ?

প্রতি ওয়াক্ত নামাজের একটি নিদিষ্টতা আছে। যেমন ফজরের নামাজে কত রাকআত ফরজ এবং কত রাকআত সুন্নত আবার জোহরের নামাজে কত রাকআত ফরজ কত রাকআত সুন্নত। তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়েও অনেকের মনে শঙ্কা যে তাহাজ্জুদের নামাজ আসলে কয় রাকআত। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ ( সাঃ) কখনও ৪ রাকআত, কখনও ৮ রাকআত আবার কখনও ১২ রাকআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাহাজ্জুদ নামাজের কোন নিদিষ্টটা নেই। তবে আপনি নফল ইবাদত যত বেশি করবেন তত বেশি সওয়াব পাবেন। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি রাকআত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী, নিয়ত ও দোআ সম্পর্কে জানতে হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে কি লাভ ?

কেউ যদি প্রশ্ন করে যে ইবাদত করে কি লাভ তাহলে তার মত বোকার সর্গ আর কোথাও নেই। মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদত বন্দেগী করার জন্য। স্বল্প সময়ের জন্য তিনি আমাদের পরিক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন। তিনি আমাদের ভালো কাজের জন্য পুরুস্কার হিসেবে বেহেশত দান করবেন এবং খারাপ কাজের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। তাহলে আপনি নিশ্চয়ই শাস্তি পেতে চাইবেন না। তাহলে আপনাকে ভালো কাজ তথা আল্লাহ্‌র ইবাদত করতে হবে। আর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা এইরকম একটি ইবাদত। আল্লাহ বলেছেন, তাহাজ্জুদের নামাজ নেককার ও উত্তম বান্দার বৈশিষ্ট্য। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।

তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা

আপনি যেকোনো সূরা দিয়েই তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে পারবেন এতে কোন বাধা বিপত্তি নাই। সাধারণ নামাজের মত তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা পড়তে হয়। তবে নবী করীম ( সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজের দীর্ঘ কেরাত পড়তেন। অর্থাৎ বড় সূরা পড়তে পারলে ভালো আর না পারলে আপনি ছোট সূরা পড়ে নামাজ আদায় করতে পারেন।

সর্বশেষ

আল্লাহ্‌ আমাদের তার ইবাদাতের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাই আমাদের বেশি বেশি তার ইবাদাতে মগ্ন থাকতে হবে। ইসলামিক নিয়ম কানুন সব জানতে হবে। ফরজ ইবাদত করার পাশাপাশি সুন্নত ও নফল ইবাদত করতে হবে এতে আল্লাহ খুশি হবে। সর্বপ্রথম আমাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী, নিয়ত ও দোআ সম্পর্কে জানতে হবে তারপর উক্ত নিয়মে নামাজ আদায় করতে হবে।

আজকের পোস্ট থেকে বিন্দুমাত্র উপকৃত হলে লাইক দিয়ে পেজটি ফলো দিয়ে পাশেই থাকবেন। বন্ধুদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করে তাদের তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করুন এবং তাদের বেশি বেশি তাহাজ্জুদ নামাজসহ আল্লাহ্‌র ইবাদত করার আহব্বান জানান।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url