কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ কি?

কালোজিরা হচ্ছে আমাদের পরিচিত একটি দানা জাতীয় বীজ। কালোজিরার গাছ দেখতে হালকা মাঝারী সাইজের হয়। প্রতিটি গাছে গোলাকার ফল থাকে এবং প্রতিটি ফলে ২০-২৫ টি কালোজিরা দানা থাকে। কালোজিরা রান্নায় মসলা, আয়ুর্বেদীয়ক, কবিরাজি, লোকজ ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়। বলা হয় কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ। কিছু কিছু বিশেষ গুণের কারণেই এই কথা বলা হয়।আজকের এই পোস্টে কালোজিরার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানবো।
  
কালোজিরাতে নানা রকম উপাদান থাকে।বিভিন্ন উপাদানের বিভিন্ন কাজ। কালোজিরার বীজ থেকে তেল পাওয়া যায় উক্ত তেল নানারকম কাজে ব্যবহার করা হয়। কালজিরার ফুলে মধুও পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে, মৃত্যু ব্যতীত কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ।

ভূমিকা

কালোজিরা চিনে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। কিন্তু কালোজিরার ব্যবহার, কি কি কাজে লাগে, কোন কোন রোগের মহাঔষধ আমরা অনেকই জানিনা। কালোজিরা দেখতে কালো ,ছোট ছোট দানাদার একটি বীজ। স্বাদ অনেকটা ঝাঁঝালো হয়। অপরের যে কালো আবরণ থাকে সেটা হাত দিয়ে ঘষা দিলে উঠে যায়। কালোজিরা অনেকভাবে খাওয়া যায়। 

কেউ চিবিয়ে খাই, কেউ পানিতে ভিজিয়ে খাই, কেউবা গুড়ো করে খাই। আমরা যেভাবেই খাই না কেন গুনাগুণ একই। কারণ কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ। কালোজিরা ব্যবহার করার ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। কালোজিরা সুস্বাস্থ্য সুরক্ষাই ভূমিকা রাখে।

কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ

প্রাচীনকাল থেকেই কালোজিরা বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহিত হচ্ছে।আমাদের ইসলামিক দৃষ্টি থেকেও কালোজিরার উপকারিতার কথা বলে আছে। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ) বহুবছর আগেই বলে গেছেন যে, কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ। সুতরাং কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহাঔষধ। 

কালজিরাতে প্রায় শতাধিক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে শর্করা ৩৮ শতাংশ, স্নেহ ৩৫ শতাংশ এবং প্রোটিন ২১ শতাংশ রয়েছে। এছাড়াও কালোজিরায় অনেক ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে। অন্যান্য ঔষধের মত কালোজিরার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বিভিন্ন ঔষধালয়ে কালোজিরা এবং কালোজিরার তেল ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা কি কালোজিরার সঠিক ব্যবহার জানি কি?,না জানিনা সেজন্য আমরা হয়ত বিশ্বাস করিনা।

কোন রোগের জন্য কীভাবে কালোজিরা ব্যবহার করতে হবে সেটা আমাদের আগে জানতে হবে। আজকের পোস্টে আমরা কালোজিরার কোন কোন সমস্যার সমাধান দেয় এবং কীভাবে আমরা ব্যবহার করবো সেটা জানবো। আসলেই কি কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ সে বিষয়ে জানবো।

চুলে কালোজিরা তেলের উপকারিতা

আমরা আগেই জেনেছি যে, কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ। কালোজিরার তেল নানাবিধ সমস্যার সমাধান দেয়। কালোজিরাার তেল অনেক সমস্যার সমাধান দেয়।কালোজিরার তেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বেড়ে যায়, স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়,কিডনি সমস্যার সমাধান দেয় মাথা ব্যথা, যৌন দুর্বলতা, কফ হাঁপানি, ডায়াবেটিক, চুলপড়া ইত্যাদি অনেক সমস্যার সমাধান দেয়। তার মধ্যে চুল পড়া অন্যতম। চুল ভালোবাসে না এমন কি কেউ আছে। 

সবার কাছেই চুল একটা অমূল্য সম্পদ কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমাদের চুল পড়ে যায় কিংবা পেকে যায়। কালোজিরা দিবে এই সমস্যার সমাধান। এইক্ষেত্রে প্রথমে লেবুর রস দিয়ে চুলগুলো ভালোভাবে ঘষুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে চুলগুলো শুকিয়ে নিন। এবার কালোজিরার তেল দিয়ে মালিশ করুন দেখবেন চুল পড়া কমে গেছে অনেক। কালোজিরার তেল ব্যবহারের ফলে আপনার চুল গুলো দেখতে কালো সুন্দর লাগবে।

কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়া কি উপকারি

কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়া সবচাইতে ভালো। চিবিয়ে খাওয়ার ফলে সমস্ত পুষ্টি উপাদান আপনি গ্রহণ করছেন। নিচে চিবিয়ে খাওয়ার কিছু উপকারি দিক তুলে ধরা হল

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • হজমশক্তি বাড়ায়
  • পেটের ব্যথা দূর করে
  • মাথা ঠাণ্ডা রাখে
  • হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
  • গ্যাসটিকের সমস্যা দূর করে
  • শরীর সতেজ রাখে
  • জৈবশক্তি বৃদ্ধি করে

কালোজিরা তেলের ব্যবহারবিধি

যেহেতু কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ সেহেতু আমাদের এটির ব্যবহারবিধি জানতে হবে। কালোজিরা আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বজায় রাখে। আমাদের উচিত এক গ্লাস পানির মধ্যে এক চিমটি কালিজিরা নিয়ে সকালে খালি পেটে খাওয়া।এছাড়া ও আমরা কালিজিরার তেলও বিভিন্ন জিনিসের সাথে মিশিয়ে খেতে পারি। আবার আপনি রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক চিমটি কালোজিরা চিবিয়ে পানি দিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। 

এতে আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়বে।বিশেষ শারীরিক দুর্বলতার জন্য দুই চিমটা কালোজিরা সাথে কয়েক ফোঁটা মধু নিয়ে খালি পেটে খেতে পারেন এতে আপনের যৌন দুর্বলতা কমবে।কালোজিরা তুলসিপাতার রস দিয়ে সেবন করলে আপনার সর্দি কাশি থাকবে না।বাতের ব্যথা দূর করণে কালোজিরার তেলের সাথে কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে সেবন করলে অনেকটা উপশম পাওয়া যায়।

বিভিন্ন ধরণের চর্ম রোগের জন্য কালোজিরার তেল বিশেষ ভূমিকা রাখে। ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার তেল খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে।অতএব বোঝায় যাচ্ছে যে কালোজিরার বহুবিধ ব্যবহার আছে যার জন্যই বলা হয় কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ ।

কালোজিরা খেলে কি গ্যাস হয় ?

অনেকেই ভাবতে পারে কালোজিরাই যেহেতু তেল আছে তাহলে কালোজিরা খেলে গ্যাস হতে পারে কিন্তু তেমন নয় কালোজিরাই আরও গ্যাস উপশম হয়। কালোজিরার তেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ করে, হৃদরোগের আশংকা কমায়। পেটের যাবতীয় ময়লা, রোগ জীবাণু এবং গ্যাস দূর করে। অতঃপর বলে যায় কালোজিরা খেলে গ্যাস হয়না বরং গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলে। এই সমস্ত গুণের জন্যই কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ ।

কালোজিরার ব্যবহার

কালোজিরার ব্যবহার বলে শেষ করা যাবে না । ছোট বড় অনেক রোগের জন্য কালোজিরা ব্যবহিত হয়। কবিরাজি ভেষজ ইত্যাদি কাজে কালোজিরার বেশি ব্যবহার দেখা যায়। কালোজিরা অনেকগুল রোগের মহাঔষধ যেমনঃ

  • মাথা ব্যথা
  • স্মরণশক্তি বৃদ্ধি
  • গ্যাস নিরাময়
  • সর্দি কাশি সারাতে
  • চর্মরোগের জন্য
  • বাতের ব্যথার জন্য
  • হৃদরোগের সমস্যায়
  • হার্টের সমসসায়
  • ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে
  • ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে
  • হাঁপানির রোগ সারাতে
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য
  • যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে
  • লিভার সুস্থ রাখতে
  • হজমশক্তি বৃদ্ধিতে
  • চুল পড়া বন্ধ করতে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং
  • উচ্চ রক্তচাপ।

কালোজিরার ক্ষতিকর দিক

এখন মনে হতে পারে যে, একটা জিনিসের এতগুলো উপকারি দিক আছে সেটার আবার ক্ষতিকর দিক কেমন করে থাকতে পারে। আসলে প্রতিটি জিনিসের একটা মাত্রা আছে। মাত্রারিক্ত হলে ভালো জিনিসও খারাপ কাজ করতে পারে। দীর্ঘদিন কালোজিরা সেবন আমাদের কিছু খতিও করতে পারে। বেশি ব্যবহার করলে পাকস্থলী জ্বালাপড়া, বুকে ব্যথা, বুক জ্বালা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে।  নিয়ম করে ৪/৫ মাস সেবন করলে এই সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।

তবে ব্যাক্তিভেদে এই সমস্যা নাও হতে পারে। তবে এই সমস্যা গুলো কিছুই না কারণ কালোজিরার ভালোর দিকটা অনেক বেশি খারাপের দিক নগণ্য তাই তহ বলা হয়ে থাকে কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ।

প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত

প্রতিটি জিনিসের একটা মাত্রা আছে। কোন জিনিসই অতিরিক্ত ভালো না স্বাস্থ্যের জন্য। কালোজিরা আমাদের নিয়মমাফিক সেবন করা উচিত। আপনি যদি সকালে কালোজিরার সেবন করতে চান তবে এক থেকে দুই চিমটা কালোজিরা এক গ্লাস পানির মধ্যে দিয়ে খেয়ে নিবেন। আর যদি আপনি কালোজিরার তেল সেবন করতে চান তবে গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। কালোজিরার বহুমুখী গুণ আছে । আপনি যেকোনো উপায়ে খান না কেন পুষ্টিগুণ আপনার শরীরে প্রবেশ করবেই।

মধু, কালোজিরা ও রসুন খেলে কি হয়

প্রতিটা জিনিসের কিছু বিশেষ গুণ থাকে। এই রকম বিশেষ গুণসম্পূর্ণ কয়েকটি জিনিস যদি একসাথে মিশিয়ে খাওয়া হয় তাহলে সেটার পুষ্টিগুণ বহুগুণ বেশি হয়ে যায়। মধু একটি পুষ্টিগুণ যুক্ত খাবার। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আর কালোজিরা সম্পর্কে তো আমরা জানিই। রসুনও একটি মসলা জাতীয় দ্রব্য যা আমাদের যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

তাহলে এই তিনটি বিশেষ বিশেষ গুণসম্পূর্ণ মিশ্রণটি আমাদের শরীরের জন্য কতোটা ভূমিকা রাখবে ভাবুন একবার। এই মিশ্রণটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় বহুগুণ। রসুন আমাদের শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা দূর করে। আর কালোজিরা সম্পর্কে তো আমরা জানি যে কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ।

লেখকের মন্তব্য

মোটকথা কালোজিরার একটি অধিক গুণসম্পূর্ণ একটি বীজ যার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের সকলের উচিত সম্ভব হলে খালি পেটে কালোজিরা সেবন করার অভ্যাস তৈরি করা কেননা নবি করিম (সাঃ) নিজে বলেছেন , কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ। কিন্তু আমাদের এর সঠিক ব্যবহার জানতে হবে। কারণ কালোজিরা সমস্ত রোগের মহাঔষধ।

অতঃপর পোষ্টটি ভালো লাগলে সাথেই থাকবেন। বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদের কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে জানার সুযোগ দিন। আর কোন বিষয়ে জানার থাকলে কমেন্ট করে বলে দিন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url