শিশুর জ্বর ১০৩ হলে করণীয় কি দ্রুত বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলের বিষয় হচ্ছে শিশুর জ্বর ১০৩ হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। সম্পূর্ণ পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনারা আরো জানতে পারবেন বাচ্চার জ্বর কমানোর উপায়, শিশুর জ্বর ১০২ ডিগ্রি হলে করণীয়, শিশুর জন্য না কমলে করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত। আপনি যদি আপনার বাড়ির শিশুর জ্বর নিয়ে দুশ্চিন্তে থাকেন তাহলে আজকের পোস্টটি পড়ে আপনি একটু হলে দুশ্চিন্তা মুক্ত হবেন তাই সম্পূর্ণ পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক শিশুর জ্বর ১০৩ হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
শিশুর জ্বর ১০৩ হলে করণীয়
জ্বর অতি পরিচিত একটি সমস্যা। জ্বর কোন বিশেষ রোগ নয়। বরং জ্বর হচ্ছে কোন রোগের লক্ষণ বা সিগন্যাল। শরীরে কোন জীবাণু বা ভাইরাস আক্রমণ করলে অর্থাৎ বড় কোন সমস্যা হওয়ার পূর্বে শরীর তার তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে উক্ত ভাইরাস ধ্বংস করার চেষ্টা করে যাকে আমরা জ্বর বলি। ছোট বড় সবারই জ্বর হয় তবে জ্বরের পরিমাণটা কমবেশি হয়ে থাকে। বিভিন্ন রকম জ্বর হতে পারে তার মধ্যে ভাইরাসের কারণে জ্বর হয় সেই ঘরের লক্ষণ গুলো হলঃ
- প্রচুর পরিমাণে হাঁচি হওয়া
- সর্দি লাগা এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
- সারা শরীরে ব্যথা অনুভব করা
- চোখ মুখ লাল হয়ে যাওয়া
- ঘন ঘন কাশি হওয়া
- খাদ্য গ্রহণে অরুচি
- মুখের কোন স্বাদ না থাকা
- বমি ভাব বা বমি হওয়া
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া
- ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূতি হয় এবং ঘাম দিয়ে জ্বর আসা
- শিশুদের ক্ষেত্রে খিচুনি হতে পারে
উপরের তো লক্ষণগুলো সাধারণত ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ।ভাইরাস জ্বর ব্যতীত আরও বিভিন্ন ধরনের জ্বর হতে পারে। জ্বর হলে করণীয়গুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- মাথায় পানি দেওয়া
- রোগীকে ফ্যানের বাতাসে রাখা
- রোগীর পুরো শরীর কুসুম পানি ভেজানো গামছা দিয়ে মুছা
- জ্বরের পরিমাণ বেশি হলে মলদ্বারে সাপোজিটরি দেওয়া
- নিয়মিত খাবার স্যালাইন খাওয়ান
- ঠান্ডা ফলের রস এবং শরবত ইত্যাদি তরল খাবার বেশি বেশি খেতে দিতে হবে
- স্বাভাবিক সকল খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে দিতে হবে
- ছোট বাচ্চার জ্বর হলে নিয়মিত মায়ের বুকের দুধ পান করান
- অতিরিক্ত জ্বর বেশি হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন
উপরের তথ্য থেকে আমরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছি শিশুর জ্বর ১০৩ হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।
শিশুর জ্বর হলে যা করা উচিত নয়
অধিকাংশ মায়েরা জানেনা শিশুর জ্বর হলে কি করা উচিত এবং কি করা উচিত না সে সম্পর্কে। যার কারণে তারা নানারকম অনিয়ম করে ফলে শিশুর সমস্যা আরও বৃদ্ধি পায়। তাই আমাদের প্রথমে জানতে হবে শিশুর জ্বর হলে করণীয় কাজগুলো এবং যে কাজগুলো করা উচিত নয় সে সম্পর্কে। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি শিশুর জ্বর ১০৩ হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো শিশুর জ্বর হলে যা করা উচিত নয় সে সম্পর্কে।
গোসল
শিশুর জ্বর হলে অনেক মা বাবা এই ভুল কাজটি করে থাকে। জ্বর হলে শিশুকে অবশ্যই গোসল করাবেন না। প্রয়োজনে হালকা কুসুম পায়ের মধ্যে কাপড় ধুয়ে শরীর মুছে দিবেন।
গরম পানীয় পান
অনেক মা আছে যারা শিশুর জ্বর হলেই শিশুকে গরম পানি বা গরম দুধ পান করায় কিন্তু এই কাজটি করা উচিত নয়। এটা শরীরের তাপমাত্রা তারতম্য করতে পারে।
শরীরের তাপমাত্রা
শরীরে হাত দিয়ে যদি গরম অনুভূত হয় তাহলেই যে সেটি জ্বর এমনটা কিন্তু নয়। অনেক মায়েরা সন্তানের কপালে হাত দিয়ে ভাবেন জ্বর আসছে এবং নানা রকম ওষুধ সেবন করান এটা মোটে উচিত নয়। তাই জ্বর হলে অবশ্যই থার্মোমিটার দিয়ে জ্বরের পরিসর পরিমাপ করা উচিত।
ওষুধ সেবন
জ্বরের ঔষধ বলতে গ্রামের মায়েরা নাপা, প্যারাসিটামল ইত্যাদি বোঝে এবং শিশুকে এই ওষুধগুলো খাওয়ায়। কিন্তু এই কাজটি মোটেও করা উচিত নয়। শিশুর জ্বর হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সিরাপ বা সাপোজিটর ব্যবহার করতে হবে।
পোশাক পরিধান
শিশুর জ্বর হলেই মা-বাবা ভারী কাথা বা চাদোর দিয়ে ঢেকে রাখে। এগুলো দিয়ে ঢেকে রাখলে তাৎক্ষণিক আরাম মিলে কিন্তু ডাক্তার গান এগুলো দিয়ে ঢেকে রাখতে নিষেধ করে এই কাজটি মোটেও করা উচিত নয়।
উপরিক্ত তথ্য থেকে আমরা ইতিমধ্যেই জেনে গেলাম শিশুর জ্বর হলে কোন কাজগুলো করা উচিত নয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
বাচ্চার জ্বর কমানোর উপায়
আজকের পোষ্টের আলোচনার বিষয় হচ্ছে শিশুর জ্বর ১০৩ ডিগ্রি হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। এই সম্পর্কে বিস্তারিত আমরা ইতিমধ্যেই উপরিক্ত তথ্য থেকে জেনে গেছি। এখন আমরা জানবো বাচ্চার জ্বর কমানোর উপায় সম্পর্কে।
মাথায় জলপট্টি দিন
জ্বরের সমস্যা সমাধানের সেরা উপায় হল মাথায় জলপট্টি। তাই আপনার বাচ্চার জ্বর হলে ঠান্ডা জলে একটি কাপড় ভিজিয়ে মাথায় জলপট্টি দিন। আবার চাইলে পুরা শরীর মুছে দিতে পারেন। এটা শরীরের তাপমাত্রা একটু হলেও কমবে এবং দুর্বলতা কেটে যাবে।
লেবুর রস খাওয়ান
জানি লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। তো ভিটামিন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই শরীরের জ্বর কমাতে আপনার সন্তানকে অবশ্যই গোটা লেবু খেতে দিন অথবা লেবুর রস করে। এতে শরীরে ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি মিটে যাবে।
তরল খাবার খেতে দিন
অতিরিক্ত জ্বর হলে শিশুকে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে দিতে হবে। তরল খাবার বিভিন্ন রকম হতে পারে যেমন চিকেন সুপ, বিভিন্ন ফলের রস বা জুস ইত্যাদি।
স্যালাইন খাওয়ান
স্যালাইন আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে এবং শরীর সুস্থ সবল এবং শক্তি প্রদান করে। তার বাচ্চার জ্বর হলে অবশ্যই নিয়মিত খাবার স্যালাইন পান করান। এতে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হবে এবং জ্বর কমে যাবে।
তুলসী পাতার রস
তুলসী পাতার রস জ্বর, সর্দি এবং কাশি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। একটু তুলসী পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন এতে জ্বর দ্রুত কমে যাবে।
ডাক্তারের পরামর্শ
ছোট বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অথবা ধৈর্য ক্ষমতা বড়দের মত নয়। তাই তারা অল্প জ্বরে হাঁপিয়ে যেতে পারে এবং নানা রকম সমস্যা হতে পারে তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয়
শিশুর জ্বর ১০৩ ডিগ্রি হলে করণীয় কি আমরা সেই সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। শিশুর হালকা জ্বর অর্থাৎ ১০০ থেকে ১০২ এরমধ্যে হলে সতি কাপড় দিয়ে পুরো শরীর মুছে দিয়ে ওষুধ সেবন করাতে হবে। এই সময় নরম খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। শিশুকে যথাসম্ভব বিশ্রামে রাখার চেষ্টা করুন। ভালোভাবে ঘুমাতে দিন ঘুম থেকে ডেকে তুলে ওষুধ খাওয়ানোর কোন প্রয়োজন নেই। যেকোনো ওষুধ সেবন করানোর পূর্বে জোর মেপে সেবন করান।
জ্বরের পরিমাণ খুব বেশি হলে এবং বাচ্চা ওষুধ খেতে না চাইলে প্রয়োজনের সাপোজিটরি ব্যবহার করুন। একটি সাপোর্টার ব্যবহার করার পর চার ঘন্টা অপেক্ষা করুন। একটি সাপোজিটর ব্যবহার করার করার ৮ ঘণ্টা পর আরেকটি ব্যবহার করতে পারবেন। আর যে কোন ঔষধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই আমাকে কিছু না কিছু খাইয়ে নিবেন অর্থাৎ খালি পেটে ওষুধ সেবন করাবেন না। খালি পেটে ওষুধ সেবন করালে এবং শিশুর যদি এসিডিটি কম হয় তাহলে বমি হতে পারে।
তাই যেকোন ওষুধ সেবন কর্নার পূর্বে অবশ্যই কিছু না কিছু খাইয়ে নেবেন। জ্বরের পরিমাণ যদি একটুও কম না হয় তাহলে দ্রুত হাসপাতালে। আজকের পোস্ট থেকে আমরা জানলাম শিশুর জ্বর ১০৩ হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।
শিশুর জ্বর না কমলে করণীয়
উক্ত কাজগুলো করার পরে যদি শিশুর জ্বর না কমে তাহলে কি করবেন। শিশুর জ্বর কমানোর জন্য ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিছু যত্ন নিলেই শিশুর জ্বর খুবই দ্রুত কমে যাবে। তাই শিশুর জ্বর না কমলে নিচের কাজগুলো করুন। আজকের পোস্ট থেকে আমরা জানলাম শিশুর জ্বর ১০৩ হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।
- শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে দিন
- শিশুকে ফ্যানের নিচে রাখুন
- মাথায় পানি দিয়ে দিন
- হালকা কুসুম পানি দিয়ে গোসল করান
- গোসল না করালে কুসুম পানিতে পুরা শরীর মুছুন
- পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার খেতে দিন
- ঢিলাঢালা পোশাক পরিধান করান
- নিয়মিত খাবার স্যালাইন পান করান
- শিশুর মাথায় ঠান্ডা পানি জলপট্টি দিন
- প্রতিদিন শিশুর জ্বর পরিমাপ করুন
লেখকের মন্তব্য
আজকের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম শিশুর জ্বর ১০৩ হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। আমরা আরও জেনেছি বাচ্চার জ্বর কমানোর উপায়, শিশুর জ্বর ১০২ ডিগ্রি হলে করণীয়, শিশুর জন্য না কমলে করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত।
সর্বপরি পোস্টটি যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। আমাদের প্রয়োজনে সকল সমস্যার সমাধান আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দিয়ে থাকি। বড়দের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করে তাদের সন্তান সন্তানের জ্বর হলে করণীয় কাজ কি সেই সম্পর্ক জানতে সাহায্য করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url