কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয় - নিম খাজনা কি বিষয়ে বিস্তারিত
কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয় তা সম্পর্কে আজকে আমরা জানবো। এছাড়াও আজকের পোস্টে আমরা জমির খাজনা চেক, খাজনা রশিদ ডাউনলোড, জমির খাজনা দিতে কি কি কাগজ লাগে, জমির খাজনা কত টাকা শতক, অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধের নিয়ম ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কেও আলোচনা করবো।
তাহলে চলুন জেনে নেই জমির খাজনা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে।
জমির খাজনা চেক
কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয় তা সম্পর্কে আমরা পরবর্তীতে জানব। এখন আমরা জানব জমির খাজনা কিভাবে চেক করতে হয় তা সম্পর্কে। আমাদের দেশে বসবাস কৃত প্রতিটি নাগরিক যে ভুমি উন্নয়ন কর দিয়ে থাকে, তাকে বলা হয় খাজনা।
পূর্বে জমির এইসব বিষয়ে ভুমি অফিসে যাওয়া লাগতো। কিন্তু বর্তমানে ঘরে বসে অনলাইনে জমির খাজনা চেক করা যায়। আমাদের নিজস্ব জমিগুলোতে কতবছর থেকে খাজনা দেয়া হয় না সেই সম্পর্কে জেনে আমাদের খাজনা পরিশোধ করা উত্তম। আমরা আমাদের জমির খাজনা দুইভাবে চেক করতে পারি। যেমনঃ
ভুমি অফিসে যেতে হবেঃ এক্ষেত্রে আপনাকে পূর্বের জমির খাজনার রশিদ অথবা নামজারীর ফটোকপি সাথে নিয়ে যেতে হবে। যা ভুমি অফিসে দেখালে আপনার জমির খাজনা বিষয়ক সকল তথ্য জানিয়ে দেয়া হবে।
মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমেঃ ভুমি উন্নয়ন কর ওয়েবসাইট বা ভুমি উন্নয়ন কর এপস এর মাধ্যমে জমির সকল তথ্য জানা যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে উক্ত ওয়েবসাইট বা এপস এ একাউন্ট করতে হবে। আর খাজনা বিষয়ক তথ্য দেখার জন্য জমির খতিয়ান নাম্বার ব্যবহার করতে হবে।
খাজনা রশিদ ডাউনলোড
পরবর্তীতে আমরা কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয় তা সম্পর্কে জানব। এখন চলুন জেনে নেই খাজনা রশিদ কিভাবে ডাউনলোড করতে হয় তা সম্পর্কে। আমাদের জমির খাজনা যদি দেয়া থাকে তাহলে তার রশিদ আমাদের কাছে রাখতে হয়।
কারন জমির রশিদ না রাখলে পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। রশিদ ডাউনলোড করার বিভিন্ন পদ্ধতি নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- প্রথমে আপনাকে ভুমি মন্ত্রনালয় এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
- এবার ভুমি উন্নয়ন কর অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- মোবাইল নাম্বার এবং পাসওয়ার্ড দিতে হবে।
- লগইন করতে হবে।
- এবার দাখিলা নামক অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- নতুন পেজে জমির মালিকের নামে খাজনার রশিদ দেখা যাবে।
- এবার রশিদের ওপর ক্লিক করলে বিস্তারিত তথ্য দেখা যাবে।
- এবার উক্ত পেজটি আপনি চাইলে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয়
একটানা তিন বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয়ে যায়। আমাদের নিজস্ব জমি আমাদের করে রাখতে খাজনা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কারন আমরা যদি ঠিকমত খাজনা না দেই তাহলে সেই জমি সরকারের হাতে চলে যায় এবং জমি তখন খাস হয়ে যায়।
যদি আমরা আমাদের জমির খাজনা তিন বছর একটানা না দেই তাহলে আমাদের জমি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং জমি খাস বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া যদি কোনো ব্যক্তি জোর করে কারো জমি দখল করে খায় তাহলে তার দুই বছরের কারাদন্ড অথবা পাচ লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হয়।
জমির খাজনা দিতে কি কি কাগজ লাগে
পূর্বে আমরা কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয় তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানব জমির খাজনা দিতে কি কি কাগজপত্র লাগে তা সম্পর্কে। আমাদের জমি যেন খাস না হয়ে যায় সেই কারনে আমরা খাজনা প্রদান করে থাকি।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জানেন না বা জানতে চান জমির খাজনা দিতে কি কি কাগজ লাগে তা সম্পর্কে। নিম্নে জমির খাজনা দেওয়ার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উল্লেখ করা হলোঃ
- জমির নামজারি খতিয়ান এর প্রয়োজন হয়।
- পর্চা বা দাখিলার কপি প্রয়োজন হয়।
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড
- স্মার্ট ফোন
- সচল মোবাইল নাম্বার
- জমির অবস্থান বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং মৌজার তথ্য।
জমির খাজনা কত টাকা শতক
পূর্বে আমরা কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয় তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানব জমির খাজনা কত টাকা শতক তা সম্পর্কে। আমাদের দেশে জমি যেন খাস বা সরকারের হাতে না চলে যায় এইজন্য জমির খাজনা প্রদান করতে হয়।
কিন্তু জমির আয়তন অনুযায়ী কত শতকে কত টাকা দিতে হয় তা আমরা অনেকেই জানি না। এখন চলুন জেনে নেই জমির খাজনা সম্পর্কে।
- ২৫ বিঘার কম কৃষি জমি হলে খাজনা মওফুক করা হয়।
- ২৫ বিঘার বেশি কৃষি জমি হলে প্রতি শতাংশ অনুযায়ী ২ টাকা করে কর প্রদান করতে হয়।
- বসবাস কৃত জায়গা যদি পৌরসভার মধ্যে হয় তাহলে প্রতি শতাংশ অনুযায়ী ১৫ টাকা কর দিতে হয়।
- পৌরসভার বাইরে হলে প্রতি শতাংশ ১০ টাকা হারে কর দিতে হয়।
- বানিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে পৌরসভার ভিতরে প্রতি শতাংশে করের হার ৬০ টাকা
- পৌরসভার বাইরে প্রতি শতাংশে করের হার ৪০ টাকা।
অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধের নিয়ম
পূর্বে আমরা কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয় তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো অনলাইনে জমির খাজনা কিভাবে পরিশোধ করতে হয় তা সম্পর্কে। অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধের জন্য আমাদের কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। কাগজপত্রসমূহ নিম্নরুপঃ
- জমির রেকর্ড বা খতিয়ান এর কপি
- দাখিলার কপি যা পূর্বে দেয়া হয়েছিল
- রঙ্গিন ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর ফটোকপি
- সচল ফোন নাম্বার
জমির খাজনা অনলাইনে
এখন আমরা উপরোক্ত কাগজপত্র ব্যবহার করে ৩ টি ধাপে জমির খাজনা অনলাইনে পরিশোধ সম্পর্কে জানবো। ধাপসমুহ নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
ধাপ-১ঃ হোল্ডিং ট্র্যাকিং করা
প্রথমে আমাদের ভুমি মন্ত্রনালয় www.land.gov.bd এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
নাগরিক কর্নার নামে একটি লিংক দেখা যাবে সেখানে ক্লিক করতে হবে।
অনলাইন ভুমি উন্নয়ন কর নামে একটি অপশন দেখা যাবে সেখানে ক্লিক করতে হবে।
এবার একটি ফর্ম আসবে। ফর্মে নিজস্ব জেলা, উপজেলা, মৌজা এবং বিভাগ নির্বাচন করতে হবে।
এবার জমির খতিয়ান এবং দাগ অনুযায়ী হোল্ডিং নাম্বার দিয়ে অনুসন্ধান অপশনে ক্লিক করতে হবে।
এবার আপনার হোল্ডিং এবং ভুমি উন্নয়ন কর এর বিভিন্ন তথ্য দেখা যাবে।
বিস্তারিত বাটনে ক্লিক করলে সমস্ত তথ্য দেখা যাবে।
ধাপ-২ঃ আপত্তি দাখিল করা
প্রথমে আপত্তি দাখিল অপশনে ক্লিক করতে হবে।
এবার একটি ফর্ম আসবে। সঠিক তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হবে।
হ্যা বাটনে ক্লিক করতে হবে।
এইভাবে আপত্তি দাখিল করতে হবে।
ধাপ-৩ঃ অনলাইনে কর প্রদান পদ্ধতি
আমাদের জমির জন্য কর প্রদানের জন্য এবার অনলাইন পেমেন্ট অপশনে ক্লিক করতে হবে।
এবার ই পেমেট অপশনে ই চালান বা সোনালি পেমেন্ট যেকোনো একটি অপশন সিলেক্ট করতে হবে।
এবার পেমেন্ট মেথড হিসেবে কার্ড, সোনালি ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং যেকোনো একটি সিলেক্ট করতে হবে।
এবার পেমেন্ট এর ধাপগুলো কমপ্লিট করে অনলাইনে জমির খাজনা প্রদান করতে হবে।
খাজনা রশিদ বের করার নিয়ম
পূর্বে আমরা কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয় তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানব খাজনা রশিদ বের করার নিয়ম সম্পর্কে। এইজন্য আমাদের কয়েকটি ধাপ অনুসরন করতে হবে। ধাপগুলো নিম্নরুপঃ
- প্রথমে আমাদের ভুমি মন্ত্রনালয় এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.land.gov.bd এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
- পেজে লগইন এর জন্য মোবাইল নাম্বার এবং পাসওয়ার্ড দিতে হবে।
- এবার দাখিলা অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- আপনি এযাবৎ যতগুলো খাজনা পরিশোধ করেছেন তা সম্পর্কে একটি পেজ ওপেন হবে।
- এবার আপনার যে তারিখ এর খাজনার রশিদ প্রয়োজন হবে তার ওপর ক্লিক করুন এবং সহজে ডাউনলোড করে নিন।
নিম খাজনা কি ?
নিম খাজনা যাকে উপ-খাজনা বলা হয়। নিম খাজনা হল স্বল্পকালে অস্থিতিস্থাপক কিন্তু দীর্ঘকালে স্থিতিস্থাপক বিভিন্ন জিনিসের আয়ের ওপর যে খাজনা নেওয়া হয় তাকে নিম খাজনা বলা হয়। যেমন মানুষ বিভিন্ন ধরণের জিনিস তৈরি করে কলকারখানা, সিমেন্ট, ইট, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, ঘরবাড়ি, দালানকোঠা ইত্যাদি এইধরণের পণ্য থেকে অর্জিত আয়ের একটি অংশ খাজনা হিসেবে দিতে হয় তাই হল উপ-খাজনা বা নিমখাজনা। আজকের পোস্ট থেকে আমরা জানলাম কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয়, জমির খাজনা চেক, খাজনা রশিদ ডাউনলোড ইত্থাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত।
লেখকের মন্তব্য
আজকের পোস্ট থেকে আমরা কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয়, জমির খাজনা চেক, খাজনা রশিদ ডাউনলোড, জমির খাজনা দিতে কি কি কাগজ লাগে, জমির খাজনা কত টাকা শতক, অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধের নিয়ম ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানলাম।
আশা করি আজকের পোস্ট থেকে আপনি আপনার মূল্যবান তথ্য পেয়েছেন। আমরা এই ধরনের পোস্ট প্রতিনিয়ত আপনাদের উদ্দেশ্যে শেয়ার করে থাকি। নিয়মিত পোস্ট পড়তে ওয়েবসাইট ফলোও করুন এবং বন্ধুদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করুন।
রাজশাহীি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url